আজ শুক্রবার। তার উপর চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। করোনার সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী চলমান এই লকডাউনের তৃতীয় দিনে রাজধানী ঢাকার প্রধান সড়কগুলো দৃশ্যত ফাঁকাই রয়েছে।
আজ সাপ্তাহিক ছুটির কারণে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও কল-কারখানা বন্ধ থাকায় শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিরাজ করছে নীরবতা।
সকালে রাজধানীর প্রগতি সরণি, গুলশান, বাড্ডা, হাতিরঝিল, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি ২৭ ও মোহাম্মদপুর এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সড়কে যানবাহনের চাপ না থাকায় অনেক চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও অবশ্য পুলিশ সদস্যদের যানবাহন থামাতে দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারে বিনা প্রয়োজনে না থাকার জন্যে মাইকিং করতে শোনা গেছে। রাস্তায় খুব কম সংখ্যক প্রাইভেট কার, সিএনজি-চালিত অটো রিকশা ও কাভার্ড ভ্যান দেখা গেছে। তবে রাস্তায় ও গলিগুলোতে মোটরসাইকেল ও রিকশা রয়েছে।
প্রধান প্রধান সড়কে পুলিশের টহল গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন কোন যানবাহন চোখে পড়েনি।
প্রসঙ্গত, ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত চলাচলের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে বাইরে যেতে হলে অনলাইনে মুভমেন্ট পাশ নিয়ে তবেই বের হওয়া যাবে।
জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, করোনার বিস্তার রোধে সাত দিনের বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি পণ্য পরিবহন করা যাবে; উৎপাদন ব্যবস্থা চালু থাকবে; জরুরিসেবা দেয়া যাবে। শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রাখতে পারবে। সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্তস্থানে কাঁচাবাজার খোলা থাকবে এবং বাজার করা যাবে।
জরুরি পরিষেবার মধ্যে রয়েছে কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম চলবে। টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি) সেবা দেয়া যাবে। গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) কর্মীরা পেশাগতদায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার সংশ্লিষ্ট কাজ করা যাবে। টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা নেয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে।
সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে জনসাধারণকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখা যাবে না। শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৯৪ জন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ালো। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ১০ হাজার ৮১ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শেষের এক হাজার রোগী মারা গেছেন গত ১৫ দিনে।
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত বেশি মানুষের চলাচল হবে, তত বেশি সংক্রমণ বাড়বে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য জেলাগুলোতে আন্তঃচলাচল কম করতে হবে, এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাওয়া যাবে না। আর সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত জায়গায় লকডাউন হলে সংক্রমণের হার কমবে।