শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
spot_img
Homeফিচারফুলবাড়ীর বলিহরপুর গ্রামে সাদা বক আর কালো পানকৌড়ীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল

ফুলবাড়ীর বলিহরপুর গ্রামে সাদা বক আর কালো পানকৌড়ীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় বলিহরপুর গ্রামে সাদা বক আর কালো পানকৌড়ী পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল । মহা সড়কের পাশে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বলিহারপুর গ্রামটিতে,প্রতিদিন পাখি দেখতে আসেন শত শত পাখি প্রেমি মানুষেরা।
কেউ চুপিসারে পাখি শিকার করতে গেলে গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়ে। অতিথি পাখিগুলোকে এ গ্রামের মানুষ পরিবারের সদস্যের মতো ভালোবাসেন।
নিরাপদ প্রজনন আবাসস্থল হিসেবে এই গ্রামে গাছের ডালে এবং বাঁশঝাড়ে সাদা বক পাখি ও কালো পানকৌড়ী পাখির দল প্রতিদিন রাত যাপন করে। ভোর হওয়ার সাথে সাথে পাখিরা কিচিরমিচির ডাকের মধ্য দিয়ে জানান দেয়, সারা দিনের
মতো তারা খাবারের সন্ধানে বের হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত মা পাখিরা ফিরে না আসা পর্যন্ত গ্রামের মানুষ পাখিদের বাসা,ডিম ও বাচ্চাদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন।
প্রতিদিন এই সাদা বক পাখি ও কালো পানকৌড়ীদের কিচিরমিচির শব্দে গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে। এমন করে প্রতিটি সন্ধ্যা নামে সাদা বক পাখি ও কালো পানকৌড়ীদের কলতানে।
দূর থেকে দেখলে মনে হয়, গ্রামের গাছে গাছে যেন থোকায় থোকায় সাদা কালো ফুল ফুটে আছে। এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে পাখি গুলো।
গ্রামবাসী সুবাস চন্দ্র রায় ও দিনেশ চন্দ্র রায় বলেন এই গ্রামটিকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ‘পাখি প্রজনন কেন্দ্র’ হিসেবে ঘোষণা করা হলে পাখির প্রতি মায়া-মমতা ও ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে।
তারা বলেন সরকারী ভাবে খাবার ব্যবস্থা করা গেলে এই এলাকায় শুধু সাদা বক পাখি ও কালো পানকৌড়ী নয়, অন্যান্য প্রজাতির পাখিরাও প্রজননের জন্য তাদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে,দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ৩২/৩৩ কিলোমিটার পূর্ব দক্ষিনে এবং ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ৭/৮ কিলোমিটার পশ্চিমে ফুলবাড়ী উপজেলার ২নং,
আলাদিপুর ইউনিয়নের বলিহরপুর  গ্রামে মহাসড়কে পাশে  একটি  খালের পাশে বাঁশ ঝাড় ও জঙ্গী গাছের ডালে হাজার হাজার সাদা বক পাখি ও কালো পানকৌড়ী আশ্রয় নেয়।
তারা প্রতিবছর বাংলা বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে আসতে শুরু করে এবং প্রজনন শেষে বাচ্চা গুলো বড় হওয়ার পর ভাদ্র মাসে চলে যায়। প্রায় ৫ মাস তারা এখানে অবস্থান করে থাকে।
গ্রামের পাশের নদী-নালা, খাল-বিল আর ফসলের মাঠ থেকে নানা জাতের  মাছ,পোকামাকড় ও শামুক-ঝিনুক খেয়ে জীবন বাঁচে এই পাখিগুলোর। নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে বাসা বেঁধে প্রজনন থেকে শুরু করে ডিম দেয়া,
ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটানো, বাচ্চা বড় করা সব কিছু এখানেই তারা সম্পন্ন করে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে এখানে প্রায় ৭ বছর ধরে বছরে ৫ মাস  বাস করে এসব সাদা বক পাখি ও কালো পানকৌড়ী পাখি।
সারাক্ষণ ডানা ঝাপটানো আর কিচিরমিচির শব্দে মুখোরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। মহিলা পাখিরা উড়ে যায় খাবার সংগ্রহ করতে। আবার খাবার সংগ্রহ করে খাবার মুখে করে নিয়ে এসে তুলে দিচ্ছে বাচ্চার মুখে।
সারা দিন চলে তাদের এমন কর্মযজ্ঞ। তবে পুরুষ পাখিরা প্রজনন ছাড়া কোন কাজ করেনা। সন্ধ্যায় পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে  হাজারো পাখির কলকাকলিতে। নির্বিগ্নে রাত কাটিয়ে ভোর হলেই উড়ে যায়। দিন শেষে আবারও তারা নীড়ে ফিরে আসে।
ফুলবাড়ী শহর থেকে দেখতে আসা ডা: মাহাফুজ আলম বলেন, এমন সুন্দর দৃশ্য বর্তমান সময়ে দেখতে পাওয়া বড় কঠিন। সকাল ও সন্ধ্যায় হাজারো পাখির কলকাকলির এই শব্দ অন্যরকম এক আবহ তৈরি করে, খুবই আনন্দদায়ক। আমার খুব ভালো লাগে। প্রায় দিন এখানে পাখি দেখতে চলে আসি।
পাখির প্রতি এই গ্রামের লোকজনের ভালোবাসা ও নিরাপত্তা দেওয়ায় এখানে পাখিগুলো প্রতি বছর আসে। একটু সরকারি সহায়তা পেলে  এখানে ‘পাখির প্রজনন কেন্দ্র’ গড়ে উঠতে পারে।
বাশঁ ঝাড়ের মালিক নলিন চন্দ্র সরকার বলেন, গত সাত বছর যাবত আমার বাঁশঝাড়সহ বলিহরপুর গ্রামের অনেক বাঁশঝাড় ও গাছে সাদা বক ও কালো পানকৌড়ী গুলো বাসা বেঁধে আসছে।
আমারা খুবই অনন্দিত। ফুলবাড়ী থানা থেকে পুলিশ এসে আমাদেরকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই পাখিগুলোকে যেন শিকারিরা এসে মারা কিংবা বিরক্ত করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সচেতন করে গেছেন।
তারা বলেছেন শিকারিরা এসে পাখি গুলো মারা কিংবা বিরক্ত করলে তাদের খবর দিতে। স্থানীয় আনোয়ার সাদাত নামে একজন শিক্ষক বলেন এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পাখি গুলি খাবার সংকটে পড়েছে।
বক এবং পানকৌড়ির প্রধান খাওয়ার মাছ। জমিতে পানি না থাকায় মাছসহ অন্যান্য পোকামাকড় তেমন পাচ্ছেনা। সরকারি ভাবে পাখি গুলোর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা গেলে হয়তো আরো বেশি প্রজনন হত।
বনবিভাগের উপজেলা বিট কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখিদের অভায়শ্রম নিরাপত্তায় সবসময় খোঁজ খবর রাখা হয়। তবে পাখিদের রক্ষার্থে সকলের সহোযোগিতা প্রয়োজন।
spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ