শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
spot_img
Homeসাবলিডকরোনায় এত মৃত্যু ও সংক্রমণ কী কারণে

করোনায় এত মৃত্যু ও সংক্রমণ কী কারণে

যতই দিন যাচ্ছে ততই করোনায় মৃত্যু রেখা ওপরে উঠছে। পেছনের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী দুই সপ্তাহে এই সংখ্যা আরো বেশি দেখতে হতে পারে। কিন্তু সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির কারণ নিয়ে স্পষ্টত কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মানুষের বেপরোয়া আচরণ, পর্যটন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নানা সভা-সমাবেশে সমবেত হওয়ার কারণে সংক্রমণ বেড়ে গেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, করোনাভাইরাসের মিউটেশন ও নতুন ভেরিয়েন্টের (ধরন) প্রভাবে সংক্রমণের দ্রুত বিস্তার ঘটেছে এবং মৃত্যুও বেড়ে গেছে।

দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছিলেন, সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে এ দফায় মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে বেড়ে যাবে। এই ভেরিয়েন্ট ইস্যুতে আলোচনা যোগ করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) উদ্যোগে করা একটি গবেষণা প্রতিবেদন।

গত বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা গত ১৮ থেকে ২৪ মার্চের মধ্যে করোনা রোগীদের প্রায় ৫৭টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে ৪৬টি অর্থাৎ প্রায় ৮১ শতাংশের ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার করোনা ভেরিয়েন্ট পেয়েছেন। আগের সপ্তাহে অর্থাৎ ১২ থেকে ১৭ মার্চের মধ্যে ৯৯টি করোনা রোগীর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে ৬৪টি অর্থাৎ ৬৪ শতাংশের বেশি দক্ষিণ আফ্রিকার ভেরিয়েন্ট পাওয়া যায়। তবে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ৩০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে অবশ্য আফ্রিকার ভেরিয়েন্ট পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনটির পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের কারণেই দেশে সংক্রমণ দ্রুত ঊর্ধ্বগতি হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে অনেকের মৃত্যু ঘটছে?

এবিষয়ে আইসিডিডিআরবির গবেষণায় সহায়তাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, গবেষণাটি হয়েছে আইসিডিডিআরবির ল্যাবে। ফলে এটি বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠী বা যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করে না। এছাড়া আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের কারণে মৃত্যু বেশি ও দ্রুত হচ্ছে, তারও এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ কোথাও পাওয়া যায়নি।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, দেশে আগের তুলনায় সংখ্যার দিক থেকে মৃত্যু বেশি হলেও সংক্রমণ ও শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যু বাড়েনি। স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা যত বেশি থাকবে ততই সংক্রমণ ও মৃত্যু কমবে। এ ধরনের মহামারিতে মিউটেশনের মাধ্যমে নিত্যনতুন ভেরিয়েন্ট আসতেই পারে, কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা একই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহম্মেদ বলেন, আইসিডিডিআরবির যে তথ্য, সেটাকে গুরুত্ব দিলে মনে হচ্ছে দেশে সংক্রমণ এভাবে বৃদ্ধির জন্য আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের একটি ভূমিকা থাকতেই পারে। তবে এটি আমরা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তাদের নমুনা সংগ্রহ কীভাবে হয়েছে সেটাও আমি পরিষ্কার নই।

প্রসঙ্গত, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৯ হাজার ৫২১ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৮৫৪ জন। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ জনে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ