স্টাফ রির্পোর্টার: গাজীপুরে ভয়ংকর আর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশের ‘সোর্স’ পরিচয়দানকারী বাবু। ‘সোর্স’ নামধারি পুলিশের এই সোর্স বাবুর দৌরাত্মে মানুষ অতিষ্ট। শহরতো বটেই, গ্রামেও সক্রিয় সে। বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসা, অবৈধ ব্যবসা, ভেজাল ব্যবসা, আসামাজিক কার্যকলাপসহ
সব ধরণের অপরাধ নিয়ন্ত্রন করে থাকে এই সোর্স বাবু। সেইসাথে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে গাঁজা বা ইয়াবা পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে মানুষজনদের ফাঁসিয়ে দেয়ার মূল নায়কও সে। গাজীপুর মহানগরের এমন কোনো পাড়া-মহল্লা মিলবে না যেখানে পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী বাবু’র দৌরাত্ম্য নেই।
সে এখন গাজীপুর মহানগর বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার মাদক ব্যবসা, বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপ সবকিছুর নিয়ন্ত্রক সে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় সোর্স বাবুর অপরাধ কর্মকান্ড, অত্যাচার ও
অনাচার জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়েছে। ভুক্তভোগীরাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। অধিকাংশ সময় সোর্স বাবুর ভুয়া তথ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন অনাকাঙ্কিক্ষতভাবে বিপদের সম্মুখীন হয়, তেমনি সাধারণ মানুষও হয় নির্যাতিত। বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশ বাবু’র সহযোগিতা নিয়ে থাকে
বলে জানা যায়। কিন্তু বাবু অনেক নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করিয়ে স্পট থেকেই মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এক সময়ের দিন মজুর বাবু হয়ে গেছে আংগুল ফুলে কলাগাছ। পুলিশের সঙ্গে সখ্যতার সুযোগে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে সে। দেহ ব্যবসা,
মাদক ব্যবসাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা সে নিয়ন্ত্রণ করছে না। অথচ নিজেকে নিরাপদ রাখতে পুলিশের সামনে কখনো আসেনা এই সোর্স বাবু। জানা গেছে, কখনো সে রাজেন্দ্রপুর, কখনো রাজাবাড়ি, কখনো বোর্ডবাজার আবার কখনো মেম্বার বাড়ি এলাকায় বসবাস সে। অভিযোগ
রয়েছে, গাজীপুর মহানগরের রওশন সড়ক এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নূরজাহান, তার মা হোসনা ও তার বাবা কৃঞ্চা, একই এলাকার ইয়াবা ও হেরোইন ব্যবসায়ী নাছিমা স্বামী সাইদুর, মারিয়ালী জামতলা কলাবাগান এলাকার নূরু মিয়া, মহানগরের ২৬নং ওয়ার্ড লক্ষীপুরা এলাকার
ইয়াবা ব্যবসায়ী শায়েল, ফারুক, মফিজ, আছিয়াসহ শহীদ নিয়ামত সড়ক, সাধু পাড়া, মুন্সিপাড়া, অনেকের কাছ থেকে নিয়মিত দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক মাসোআরা খেত এই সোর্স বাবু। অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, এসব মাদক ব্যবসায়ীরা বাবুকে টাকা না দিলে ঠিকমত ব্যবসা করতে
পারেনা তারা, একদিন টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে, পরের দিন বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে দেয়। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে থাকে বাবু। আরো অভিযোগ রয়েছে কখনো সে গাজীপুর সদর থানা পুলিশ, কখনো মহানগর ডিবি
পুলিশ, কখনো গাজীপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে এই সোর্স বাবু। বাবু যুবসমাজের মাঝে মাদক সাপ্লাই দিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে উঠতি বয়সের যুবকদের ভবিষ্যৎ। অদৃশ্য শক্তির কারণে সোর্স বাবুর
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ। সদর থানার এক পুলিশ সদস্য জানিয়েছে, সোর্স বাবুর ভুয়া তথ্যে পুলিশ সদস্যদেরও অনেক সময় অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।
লক্ষীপুরা এলাকার কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, পুলিশের পরিচয়দানকারী সোর্স বাবুর অত্যাচারে
এলাকার অনেকেই অতিষ্ঠ। তাকে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখলেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। কখন যে কাকে টার্গেট করবে সে আশঙ্কায় কাটে সময়। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সাধারণ মানুষকে দাঁড় করিয়ে সোর্স বাবু তাদের পকেটে ইয়াবা বা মাদক দিয়ে
ব্ল্যাকমেইল করে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, সোর্সদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিং থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তবে বাবুর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে
অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয়টি অবশ্যই দেখা হবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ(জিএমপি’র) সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, আমি তাকে চিনিনা। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। কোথাও পুলিশের নাম ব্যবহার করে হয়রানি করেছে
এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গাজীপুরের সচেতন মহল মনে করছেন বাবুর এসব এহেন অনৈতিক কর্মকান্ড না রুখতে পারলে ভবিষ্যতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে সে। এতে করে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।