কুড়িগ্রামের উলিপুরে ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে বৃদ্ধ মাকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মা সাহেরা বেগম (৬৫) থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার তিন দিন পেড়িয়ে গেলেও কোন সুরাহা মেলেনি।
ছেলের হামলায় আহত ও আতঙ্কিত ওই মা নিরাপত্তাহীনতায় বর্তমানে তার মেয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন। বুধবার (৫ এপ্রিল) বিকালে তনুরাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী সাহেরা বেগম তনুরাম গ্রামের মৃত আব্দুস ছালামের স্ত্রী।
তার ছেলের নাম শাহাদৎ আলী মুকুল (৪২) ও পুত্রবধূর নাম মাসুদা আক্তার ঝর্ণা (৩৬)।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের তনুরাম এলাকায় সাহেরা বেগম দুই ছেলেসহ স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।
গত ৫ এপ্রিল পারিবারিক বিষয় নিয়ে বড় ছেলে শাহাদৎ আলী মুকুল (৪২) এর সাথে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। এ সময় মুকুল ও তার স্ত্রী ওই বৃদ্ধাকে গলা ধরে ধাক্কা দেন ও সুপারির গাছের বাকল দিয়ে মারধর করে আহত করেন।
পরে স্থানীয় লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুই দিন চিকিৎসা শেষে তিনি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাড়িতে না গিয়ে মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (৮ এপ্রিল) ভুক্তভোগী সাহেরা বেগম প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বুধবার (৫ এপ্রিল) রাতেই আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।
পরদিন থানা থেকে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করতে প্রথমে আমার এলাকায় ও পরে হাসপাতালে গিয়ে আমার কাছে বিস্তারিত শোনে। ভর্তি হওয়ার দুইদিন পর আমি কিছুটা সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে মেয়ের বাড়িতে চলে যাই। সেদিন থেকে মেয়ের বাড়িতেই অবস্থান করছি।
ছেলে ও ছেলে বউয়ের ভয়ে আমি আমার বাড়িতে যেতে পারছি না। তারা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চায়। আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ওই বাড়িতে নাকি আমার কোনও অধিকার নাই। তাহলে এই বয়সে আমি কোথায় যাবো, কার কাছে বিচার চাইবো।’
ছেলের হাতে আগেও একাধিকবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জানিয়ে ভুক্তভোগী এই মা আরও বলেন, ‘অভিযোগ দেয়ার কয়েক দিন পেড়িয়ে গেলেও থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
তারা আমাকে মিমাংসা করতে বলে। আগেও মিমাংসা করে দিছে। তারপরও আমাকে মারে। এখনও নির্যাতন করছে। মিমাংসা না, আমি অমন ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর বিচার চাই।’
ছেলে শাহাদৎ আলী মুকুল মাকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ গুলো ভন্ডামি কথা। আমি মাকে মারধর করেনি। এছাড়া আমার স্ত্রী ঘর থেকে বাহিরে বের হয়না।
মাকে মারধর করার প্রশ্নই উঠে না।’ পারিবারিক বিরোধে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে জানিয়ে মুকুল বলেন, ‘ঘটনার দিন মা আমার বোনের বাড়িতে ছিলেন।
আমার ছোট ভাইয়ের সাথে আমার ধস্তাধস্তির খবরে মা বাড়িতে এসে কোনও কিছু না শুনে আমাকে ধরছে। এসময় তাকে অন্যরা ছুটিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়টি আমার ছোট ভাই ও ভগ্নিপতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।’
থানা পুলিশ বলছেন, মা-ছেলের দ্ব›েদ্ধর বিষয়ে এর আগেও থানায় অভিযোগ হয়েছিল। তখন উভয় পক্ষকে নিয়ে মিমাংসা করা হয়েছে। এবারও ভুক্তভোগী মা নির্যাতনের অভিযোগে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
তবে এবার ভুক্তভোগী মা মিমাংসায় আগ্রহী নন। উলিপুর থানার ওসি শেখ আশরাফুজ্জামান অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এক পুত্রবধূর কারণে বারবার বিরোধ তৈরি হচ্ছে।
এবার ধাক্কা ধাক্কির ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। আমরা অভিযোগটি জিডি মূলে গ্রহণ করে আদালতে পাঠিয়েছি। পাশাপাশি মা-ছেলের মধ্যে মিমাংসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।