সুনামগঞ্জে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে মদ ও গাঁজার চালানসহ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে। থানায় দায়ের করা হয়েছে একাধিক মামলা। গ্রেফতারকৃতরা হলো- জেলার জামালগঞ্জ
উপজেলার আনোয়ার হোসেনের ছেলে শাহিনুর মিয়া (২২), একই উপজেলার মৃত তারা মিয়ার ছেলে কবির হোসেন (৩০), ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা সদরের পাগাছং মধ্যপাড়া এলাকার মৃত হোসেন আলীর মেয়ে মাদক সম্্রাজ্ঞী মোছাম্মদ
জৈগন বেগম (৬০), ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৪০) ও তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মাহারাম গ্রামের মৃত হাবি রহমানের ছেলে কাজল মিয়া (২৮)। আজ রবিবার (১৪ মে) সকালে পৃথক ভাবে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ, বিজিবি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গত শনিবার (১৩ মে) সকাল ৯টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ বাজারে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী শাহিনুর ও কবির হোসেনকে গ্রেফতার করে
পুলিশ। পরে তাদের সাথে থাকা ব্যাগ থেকে ৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ল ঘাটে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভৈরবগামী মেসার্স হাজী আব্দুল গনি ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট নামক ল থেকে মাদক
সম্্রাজ্ঞী মোছাম্মদ জৈগন বেগম ও তার ভাই গিয়াস উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের সাথে থাকা ২টি ট্রলি ব্যাগ তল্লাশী করে ২০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। তারা তাহিরপুর উপজেলার কামড়াবন্দ গ্রামের হাবিব সারোয়ার (তোতলা
আজাদ) এর মাধ্যমের গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে বলে জানা যায়। এদিকে গত শুক্রবার (১২ মে) রাতে তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অফিসার চয়েজ মদ পাঁচার করে
বস্তা বোঝাই করে কামড়াবন্দ গ্রামে তোতলা আজাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী কাজল মিয়াকে গ্রেফতার করে। এসময় তার সহযোগী তাজুল মিয়া ৬৮ বোতল মদ
ফেলে পালিয়ে যায়। সীমান্ত চোরাকারবারীদের গডফাদার হাবিব সারোয়ার (তোতলা আজাদ) এর নেতৃত্বে উপজেলার বীরেন্দ্রনগর, চারাগাঁও, বালিয়াঘাট, টেকেরঘাট, চাঁনপুর ও লাউড়গড় সীমান্ত এলাকা দিয়ে একাধিক মামলার আসামী
লালঘাট গ্রামের ইয়াবা কালাম মিয়া, দুধের আউটা গ্রামের জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, লাকমা গ্রামের রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, বড়ছড়ার ইসাক মিয়া, বুরুঙ্গাছড়ার কামাল মিয়া, চাঁনপুরের আবু বক্কর, বারেকটিলার রফিকুল
মিয়া, নয়াবন্দ গ্রামের নেকবর আলী, লালঘাটের খোকন মিয়া, মানিক মিয়া, রুবেল মিয়া, চারাগাঁও এর সুলতান মিয়া, সুহেল মিয়া, আমির আলী, জামির আলী, আনোয়ার হোসেন বাবলু, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, কলাগাঁও এর রফ মিয়া,
শামীম মিয়া, রিপন মিয়া, সাইফুল মিয়া, জঙ্গলবাড়ির নজরুল মিয়া, হাবি রহমান, ছোহরাব মিয়া ও লামাকাটার লেংড়া জামালসহ লাউড়গড় এলাকায় সিন্ডিকেডের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবত চোরাচালানের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে
কয়লা ও পাথরসহ মদ, গাঁজা, ইয়াবা, গরু, ছাগল, পান-সুপারী, নাসির উদ্দিন বিড়ি পাচাঁর করছে। সম্প্রতি চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পে কমান্ডার হিসেবে নায়েক সুবেদার খাদেমুল ইসলাম যোগদান করে গত একমাসে পৃথক অভিযান
পরিচালনা করে গডফাদার তোতলা আজাদের ৫০ মেঃটন চোরাই কয়লাসহ তার বাহিনীর প্রায় ১২০ মেঃটন অবৈধ কয়লা ও বারকি নৌকাসহ মদ, গরু, চিনি ও ২৩বস্তা সুপারী জব্দ করেছেন। আর এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার
(১১ মে) দুপুরে সীমান্তের কলাগাঁও মাইজহাটি নামকস্থানে বিজিবির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে চোরাকারবারীদের গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার বাহিনী। কারণ সরকারের লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে কয়লা ও
মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের পর সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে পাচাঁরকৃত ১ মেঃটন চোরাই কয়লা থেকে ১হাজার করে ও ১বস্তা চিনি থেকে ৫শত টাকা চাঁদা নেয়সহ ইয়াবা, মদ ও নাসিরউদ্দিন বিড়ির মহল থেকে
সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে মোটা অংকের চাঁদা উত্তোলন করে গত একবছরে কোটিপতি হয়েগেছে তোতলা আজাদ। তবে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করতে গিয়ে তোতলা আজাদ একাধিক চাঁদাবাজি মামলা ও গণধৌলাইয়ের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এব্যাপারে চারাগাঁও ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার খাদেমুল হক বলেন- চারাগাঁও সীমান্তে চোরাকারবারীদের গডফাদার হাবিব সারোয়ার তোতলা আজাদের অবৈধ কয়লা, মদ, চিনি ও সুপারী আটক করার কারণে সে তার বাহিনী
দিয়ে মানববন্ধন করার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক অভিযানে গাঁজা ও মদসহ ৫ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শান্তিগঞ্জ থানার ওসি মোঃ খালেদ চৌধুরী ও জামালগঞ্জ থানার ওসি মীর মোঃ আব্দুর নাসের।