মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া-: সুনামগঞ্জের সীমান্তে অবস্থিত যাদুকাটা, চলতি ও চেলা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে শতশত গ্রাম। এজন্য ভোক্তভোগীরা অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ী করছে।
গতকাল বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে জেলার দোয়ারাবাজার সীমান্তের চেলা নদীর তীর কেটে বালি উত্তোলন নিয়ে ইজারাদার ও স্থানীয়দের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে ১৫জন।
তাদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় মোশাহিদ আহমদ (৬৫), আব্দুস সালাম (৬০), আব্দুস সোবহান (৪৫), হোসাইন আহমদ (২৫), কাবিল মিয়া (৪৫), আরব আলী (৫৫), মঈনুল ইসলাম (২৫) কে ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে রাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্যদিকে যাদুকাটা নদীতে ডুবে আবু সাইদ নামের এক বালি শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী ও ভোক্তভোগীরা জানান- সরকার কর্তৃক সীমানা নির্ধারণ করে জেলার তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত নদী যাদুকাটা, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা সীমান্ত নদী চলতি ও ছাতক-দোয়ারাবাজার সীমান্ত নদী চলতি লীজ প্রদান করা হলেও আইন অমান্য করে প্রতিদিন নদীর তীর কেটে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে।
ফলে ৩ নদীর দুইপাড়ে অবস্থিত শতশত গ্রাম ও রাস্তাঘাট ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে অনেকের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েগেছে। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই হয়েছে নিঃস্ব। অন্যদিকে নদীর তীর কেটে বালি বিক্রি করে অনেকেই আবার হয়েগেছে কোটিপতি।
সরেজমির গিয়ে দেখা গেছে- চেলা নদীর তীরে অবস্থিত নরসিংপুর ইউনিয়নের পূর্বচাইরগাঁও, সারপিনপাড়া, সোনাপুর, রহিমেরপাড়া, দৌলতপুর ও যাদুকাটা নদীর তীরে অবস্থিত লাউড়গড়, বিন্নাকুলি, রাজারগাঁও, মানিগাঁও, আদর্শগ্রাম,
মিয়ার ছড়, সোহালা, পাঠানপাড়া, সাদেরখলা, বাঘগাঁও, ঢালারপাড়, মোদেরগাঁও, ঘাগড়া গ্রামসহ বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা সীমান্তের চলতি নদীর ভাঙ্গনে, নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
স্থানীয় অসাধু চক্ররা অপরিকল্পিত ভাবে তীর কেটে অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙ্গন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এজন্য ইতোমধ্যে অনেকেই তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সড়িয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
এব্যাপারে পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের ভোক্তভোগী শাজাহান মিয়া বলেন- আমার সবকিছু নদীগর্ভে চলে গেছে। আমি এখন অন্যের বাড়িতে মাঁচা তৈরি করে বসবাস করছি। সারপিনপাড়া এলাকার ভোক্তভোগী আজাদ মিয়া, সানুর আলী ও মঈনুল ইসলাম বলেন- নদী আমাদের বসতবাড়ি ও জায়গা-জমি সব গিলে খেয়েছে।
এপর্যন্ত আমরা ৫ বার বসতবাড়ি স্থানান্তর করেছি। কিন্তু আমাদের দুঃখ-কষ্ঠ দেখার কেউ নাই। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়েজ উদ্দিন বলেন- বালু খোকোরা দীর্ঘদিন যাবত নদী লুটে খাচ্ছে।
কিন্তু এব্যাপারে কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়না। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন- সম্প্রতি যাদুকাটা নদীতে ডুবে ২ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া নদীর ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়েছে শতশত মানুষ। অবৈধ বালি খেকোদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে কোন লাভ হয়না। এব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন। দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান আল-
তানভীর আশরাফী চৌধুরী বলেন- শুধু চেলা নদী নয়, আমার উপজেলার সুরমা ও খাসিয়ামারা নদীর ভাঙ্গনেও মানুষ ক্রমশ নিঃস্ব হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা সাংবাদিকদের জানান- পাহাড়ি নদী চেলাসহ
অন্যান্য নদীর তীব্র ¯্রােতে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নদী ভাঙ্গন রোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বড় প্রকল্প প্রয়োজন। এব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি ডিও লেটার দেন, তাহলে বড় প্রকল্প বরাদ্দ সম্ভব।