সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে একদিকে লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে জমজমাট চোরাচালান, অন্যদিকে নদীপথে বৈধ কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহণের সময় নদীপথে হচ্ছে চাঁদাবাজি।
এসবের প্রতিবাদে গত ৬দিন যাবত ৩ শুল্কস্টেশনের আমদানী কারকরা তাদের কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহণ সারাদেশে বন্ধ রেখেছে। তারপরও থেমে নেই অবৈধ পথে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর।
গতকাল বুধবার (১৩ সেপ্টেম্ভর) রাত ১২টার পর থেকে আজ বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্ভর) ভোর পর্যন্ত সীমান্তের চারাগাঁও, বীরেন্দ্রনগর, বালিয়াঘাট, টেকেরঘাট, চাঁনপুর ও লাউড়গড় এলাকা দিয়ে শতাধিক ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এব্যাপারে বড়ছড়া কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক সমিতির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন- আমরা প্রায় ৭শত আমদানী কারক রাজস্ব দিয়ে উপজেলার বড়ছড়া, বাগলী ও চারাগাঁও শুল্কস্টেশন দিয়ে বৈধ ভাবে ভারত থেকে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী করি।
সেই কয়লা ও চুনাপাথর পাটলাই নদী দিয়ে পরিবহণ করার সময় একদিকে প্রতি নৌকা থেকে খাস আদায়ের নামে ১০-১৫ হাজার ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নামে প্রতি নৌকা থেকে ২০ থেকে
৫০হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে হয়। অন্যদিকে প্রতিদিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে কয়লা ও চুনাপাথর পাঁচার করে চোরাকারবারীরা আমাদের ব্যবসার ক্ষতি করছে। এসব বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনকে বারবার জানানোর পরও কোন
সমাধান না হওয়ায়, গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্ভর) থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ৩ শুল্কস্টেশনের বৈধ কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহণ বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়াও গত রবিবার (১০ সেপ্টেম্ভর) জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার,
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও আমদানী কারক রাশিদ মিয়া, শাজাহান খন্দাকার, ধন মিয়া, আবুল বাশার খান, জিয়াউর খান ও বাবুল মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন- তাহিরপুর থানার সাবেক ওসি আব্দুল লতিফ
তরফদার সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ মালামাল ও নৌকা আটক করে যাদের নামে মামলা দিয়েছিলেন, সেই আসামীদের নিয়ে সিন্ডিকেড তৈরি করে গডফাদার হাবিব সারোয়ার তোতলা আজাদ নিজে ব্যবসা করছে।
সেই সাথে থানা-পুলিশ, সাংবাদিক ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে পাচাঁরকৃত প্রতিনৌকা কয়লা ও চুনাপাথর থেকে ২৫ থেকে ৪০হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে গত ২বছরে সে হয়েগেছে কোটিকোটি টাকার মালিক।
তোতলা আজাদ ও তার সোর্স ইয়াবা কালাম, নেকবর আলী, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু, খোকন মিয়া, রুবেল মিয়া, রফ মিয়া, সাইফুল মিয়া, লেংড়া জামাল, জসিম
মিয়া ও বায়েজিদ মিয়ার নেতৃত্বে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথর পাঁচার করতে গিয়ে সম্প্রতি লাকমা সীমান্তে গর্তে পড়ে ১জন ও লাউড়গড় সীমান্তে নদীতে ডুবে ১জনের মৃত্যু হয়েছে।
লাকমা গ্রামের চোরাকারবারী রফিকুল ইসলাম বলেন- আমরা পাচাঁরকৃত প্রতি বস্তা কয়লা থেকে আজাদ মামাকে ২০টাকা, রাজ্জাক মামাকে ২০টাকা চাঁদা দেওয়াসহ সবাইকে ম্যানেজ করে এই কাজ করি।
শুধু আমি না আরো অনেকে আছে। ওই গ্রামের একাধিক মামলার আসামী সোর্স পরিচয়ধারী রতন মহলদার বলেন- তোতলা আজাদ ভাই হল আমার এলাকার জামাই, আমাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখালেখি করলে কিছুই হবেনা, যত পারেন লেখতে থাকেন।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার তাজুল ইসলাম বলেন- এই এলাকার মানুষ অবৈধ কয়লা ও চুনাপাথরের জন্য কেন এত পাগল তা বুঝিনা। তবে আমার সামনে পড়লে কাউকে ছাড়বনা।
টেকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার ওবায়দুর বলেন- সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজির বিষয় নিয়ে আমি কিছুই বলতে পারবনা। এব্যাপারে আমাদের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।