বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
spot_img
Homeকৃষিকুড়িগ্রামে বোরো ক্ষেতে নেকব্লাস্টে দিশেহারা কৃষক

কুড়িগ্রামে বোরো ক্ষেতে নেকব্লাস্টে দিশেহারা কৃষক

‘পঁচিশ শতক ধানের ভুঁই গাড়ছি। তাক হিনা আপদ ধরছে। এ্যালা কি খায়া বাঁচমো বাবা কনতো বাচ্চা কোচ্চাক নিয়া! করোনার জন্য মানুষের দেহো কি দুর্গ-দশা হয়া গেইচে। মানুষ বাঁচপের নাগছে না। এ্যালা কি করমো কনতো!’ এমন আক্ষেপের কথা জানালেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের জয়দেব হায়াত গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ আয়মন বেওয়া। তিনি পঁচিশ শতক জমিতে ব্রিধান-২৮ লাগিয়েছিলেন যা নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে সব চিটা হয়ে গেছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, বিরুপ আবহাওয়া এবং কীটনাশক কাজে না লাগায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বোরো ধান নেকব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে চিটা হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়ার পথে রয়েছে আরো অনেক বোরো ক্ষেত। এই ধান দিয়েই বছরের বেশিরভাগটা সময় খাবার যোগান দিত যে কৃষক পরিবার; এখন তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ। কৃষি বিভাগের পরামর্শ এবং সংক্রমিত জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেও শেষ রক্ষা হয়নি এবার।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে চিকন ধান আবাদ করা হয়েছে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে। এসব চিকন ধানেই দেখা দিয়েছে নেক ব্লাস্টের আক্রমন। বিশেষ করে ব্রিধান-২৮ ও ব্রিধান-৮১ যারা লাগিয়েছেন তারা পরেছেন বিপাকে। ফলে এসব কৃষকের দিশেহারা অবস্থা। কৃষি বিভাগ বলছে বিরুপ আবহাওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে কীটনাশক কাজে না লাগায় ধান ক্ষেতে দেখা দেয় এই নেক ব্লাস্ট (ধানের গলাপচা রোগ)। সংক্রমিত জমিতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করেও পুরোপুরি কাজ হচ্ছে না। একরের পর একর জমিতে পাকা ধানে চিটা হয়ে যাচ্ছে। যে ধান পরিবারের খাদ্য মেটানোর পর খরচ ওঠানোর কথা; সেই কাংখিত ধান না পেয়ে হতাশ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।

রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের জয়দেব হায়াত গ্রামের মৃত: নছর উদ্দিন তেলির পূত্র নুর মোহাম্মদ (৫০) জানান, ‘এক একর জমির ভাতই আমি খাই এবং ২/৪ মন বেঁচি কামলা কৃষাণের দাম দেই। এখন বেঁচাতো দূরের কথা নিজের ভাতও হবার নয়। পরামর্শ মোতাবেক আমি খরচো করছি, অষুধ পাতিও দিছি। ট্রিটমেন্ট ঠিকি করছি অথচ ধান চিটা হইছে।’

এই গ্রামের অপর কৃষক গোলজার হোসেন জানান, ‘আমার জমি হলো ৬০ শতক। মোটা লাগাইছি ৩০ শতক আর চিকন ২৮ধান লাগাইছি ৩০ শতকে। ঔষধও ঠিকমতো দিছি। তিনবার ঔষধ দিছি। তারপরও কোন কাজ হয় নাই। না হওয়াতে একবারে সাদা হয়া গেইছে শীষ। কাটার উপযোগী নয়। এখন মনে হয় ২মন ধানও হবে না।’

একই অভিযোগ জানালেন অচিনগাছ এলাকার কৃষাণি আমিনা ও জয়গুন। এবার ধান চিটা হওয়ায় ছেলেমেয়ের খাবার নিয়ে চিন্তায় রয়েছে তারা। করোনার কারণে স্বামীরা শ্রম দিতে বাইরে যেতে পারছে না। এদিকে অনেক টাকা খরচ করে ধানও পাওয়া গেল না। ফলে চরম হতাশার ছাপ তাদের চোখেমুখে।

সদরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের উপসহকারি কৃষি অফিসার তরিকুল ইসলাম জানান, মাঠে মোটা ধানের কোন সমস্যা হচ্ছে না। সঠিক নিয়মে ঔষধ দেয়ার পরও কৃষকরা ব্যর্থ হচ্ছে। মনে হচ্ছে ঔষধের মান কাজে দিচ্ছে না। কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জরুল ইসলাম জানান, এখন ধান কর্তন শুরু হয়েছে। প্রথম দিকের ফলনগুলো একটু কম আসলেও পরবর্তীতে যে ধানগুলো কাটা হবে সেগুলো খুবি ভাল অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে নেক ব্লাষ্টের কোন আক্রমন নাই। সাধারণত: কৃষক আক্রান্তের পরে কীটনাশক স্প্রে করায় ফলাফল পাচ্ছে না। আগে থেকেই ঔষধ দিলে এমন ক্ষতি হত না।

spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ