খুলনার পাইকগাছায় সজিনার বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সজিনা ভালো ফলন হয়েছে। বসতবাড়ীর আশে পাশে রাস্তার ধারে ক্ষেতের আইলে লাগানো সজনে গাছ যত্ন ছাড়াই অবহেলার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। সজিনা পুষ্টি ও ভেজষগুণে ভরা সবজি।
পাইকগাছা কৃষি অফিস সূত্রে, ২০১৯ সালে ১৬ হাজার ও ২০ সালে ৯ হাজার মোট ২৫ হাজার সজিনার শাখা বা ডাল রোপণ করা হয়। রোপণকৃত ডালে প্রায় ৩০ শতাংশ মারা গেছে। দেশে ২টি জাতের পাওয়া যায়। একটি হালো সজিনা ও আর একটি নজিনা। ভারত থেকে হাইব্রিড সজিনার জাত এদেশে এসেছে। এ জাতের বীজ বপণ করে লাগাতে হয়। হাইব্রিড জাতের সজিনা গাছে দু’বার ফুল আসে, ফেব্রুয়ারী-মার্চ ও জুন-জুলাই মাসে। গত বছর উপজেলায় ২১ হাজার সজিনার ডাল রোপণ করা হয়।
পুষ্টি ও ভেজষ বিশেষজ্ঞরা জানান, সজিনা পাতার শাক সুস্বাদু এবং রুচি বৃদ্ধি করে। এতে ভিটামিন এ. বি. সি. নিকোটিনিক এসিড, প্রোটিন, চর্বি জাতীয় পদার্থ ও কার্বহাইড্রেটসহ অন্যান্য খনিজ লবণ যেমন-ক্যালসিয়াম, আয়রণ, পটাসিয়াম প্রচুর থাকে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, সজিনা পাতায় দুধের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম, গাজরের চেয়ে বেশি ভিটামিন এ, কমলা লেবুর চেয়ে বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চেয়ে বেশি আয়রণ, কলার চেয়ে বেশি পটাসিয়াম এবং ডিম ও দুধের সমপরিমাণ প্রোটিন বিদ্যমান। ২ গ্রাম সজনে পাতার রস ১ গ্রাম বিট লবণসহ খেলে বহুমূত্রে উপকার পাওয়া যায়। পাতা বেঁটে রসুন, হলুদ, লবণ ও গোল মরিচসহ খেলে কুকুরের বিষ নষ্ট হয়। ২-৪ফোঁটা পাতার রস দুধের সাথে মিশিয়ে ২-৩ বার খেলে হিক্কা ওঠা বন্ধ হয়। পাতা রোদে শুকিয়ে পাউডার করে কয়েক মাস রেখে দেওয়া যায়। এতে গুণগত মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। সজিনার ফুল শাকের মত রান্না করে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভাল। এটি বসন্ত প্রতিষেধক। সর্দি-কাশির দোষে, শোথে, প্লীহা ও যকৃতের কার্যকারিতা কমে গেলে, কৃমির আধিক্য থাকলে এবং টনিকের অন্যতম উপাদান হিসেবে ফুল ব্যবহৃত হয়। সজিনার ফল অর্থে-ডাঁটা যকৃত ও প্লীহার অসুখে, ধনুষ্টংকার ও প্যারালাইসিসে উপকারী। বাতব্যাধি রোগাক্রান্তদের জন্য এটা খুবই ভাল। কৃমিনাশক ও জ্বরনাশক হলে পক্ষাঘাতে ব্যবহার করা হয়।
সজিনার বীজ জীবানুনাশক এবং প্রজনন ক্ষমতা সহায়ক। বীজ চূর্ণ পানিতে মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়ায় উপকারী ও রক্তে প্রটোজোয়ার পরজীবিদের ধ্বংসকারক এবং কালাজ্বরে বিশেষ উপকারী। ছালের রস মাথা ব্যাথায় ও মূত্রকৃচ্ছতায় কার্যকরী।পুরানো সজিনা গাছের ছাল থেঁতলে টাক মাথায় নিয়মিত ঘষলে নতুন চুল গজায়। মূল ম্যালেরিয়ায় কার্যকরী। মূলের ছাল বায়ুনাশক, হজমবৃদ্ধিকারক এবং হৃদপিন্ড ও রক্ত চলাচলের শক্তিবর্ধক। মূলের ছালের জলীয় নির্যাস স্নায়ুবিক দুর্বলতা, তলপেটে ব্যাথা ও হিস্টিরিয়া চিকিৎসায় উপকারী। এছাড়া তাজা মূলের রস দুধসহ সেবনে অভ্যন্তরীণ প্রদাহ, প্লীহা বৃদ্ধি, অরুচি, হাঁপানী নিবারক, গেঁটে বাতে উপকারী ও মূত্রকারক। হাড় মচকে গেলে কিংবা থেঁতলে গেলে আদা ও সজিনার ছাল বাটার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।
টিউমারের প্রথম অবস্থায় গ্রন্থিস্ফীতিতে অথবা আঁঘাত জনিত ব্যাথা ও ফোলায় পাতা বেঁটে অল্প গরম করে লাগালে টিউমার ও ফোঁড়া বহুক্ষেত্রে মিলিয়ে যায় এবং ব্যাথা থাকলে উপশম হয়। মূলের ছালের প্রলেপ দিলে দাঁদ কমে যায়। চোখ ব্যাথা করা, পানি পড়া বা পিচুটি পড়ায় পাতা সিদ্ধ করে এ পানি দিয়ে চোখ ধুলে সেরে যায়। কান্ডে ৪-হাইড্রক্সিমেলেইন, ভ্যানিলিন, অকটাকোসানোইক এসিড, ৩-সিটোস্টেরল ইত্যাদি পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজিনার সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। উপজেলার প্রায় প্রতি বাড়ীতে কমবেশি সজিনা গাছ আছে। সজিনা পুষ্টিকর সবজি হিসাবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।