শেরপুরের পৌরসভাতে করোনা সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় শেরপুর পৌর এলাকায় জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে ৯ দফা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন জেলা প্রশাসন।
গতকাল ১১জুন শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়েছে এবং ২৪ জুন পর্যন্ত তা বহাল রাখা হবে।জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরে করোনা পরিস্থিতি দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
গত ১ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত শেরপুর জেলায় ৯০ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তন্মধ্যে গত ৪৮ ঘণ্টায় জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০ জন।
আক্রান্তদের অধিকাংশই পৌর এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে শেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির রুমান,বর্তমান মেয়র ও জেলা আ.লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন এবং জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা ও ফুটবল এসোসিয়েশন এর সভাপতি মানিক দত্ত।
জানা যায়,বুধবার করোনায় আক্রান্ত হন মেয়র লিটন। গত চারদিন আগে আক্রান্ত হয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান।
এছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক নেতা মনিক দত্তের শরীরে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রুমান ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
তিনি এখন আগের তুলনায় অনেকটা ভাল আছেন, তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বলে তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। মেয়র লিটন ঢাকার উত্তরার বাসায় আইসোলেশনে আছেন।
মেয়র লিটনের জ্বর,মাথা ব্যাথা থাকলেও বড় কোনো সমস্যা নেই। মানিক দত্ত শহরের চকবাজারে নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন এবং তিনি অনেকটা সুস্থ থাকলেও শরীরে হাল্কা ব্যথা রয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, শেরপুর জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩৭ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলাতেই আছেন ৪৪৮, নকলায় ১৪৭, নালিতাবাড়িতে ১১৭, শ্রীবরদীতে ৬৩ ও ঝিনাইগাতিতে ৫৬ জন। শেরপুরের সিভিল সার্জন একেএম আনওয়ারুর রউফ জানান, জেলায় কোভিড ১৯(করোনা) পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শেরপুর জেলা রেডজোনে পড়বে। তিনি সকলকে আরও সতর্ক হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) রাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনার কলি মাহবুব স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে কঠোর বিধিনিষেধের আরোপ করেছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গণবিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর পৌর এলাকার কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির বাসস্থান লকডাউনের আওতাভুক্ত থাকবে এবং পরিবারের কেউ বাইরে যাতায়াত করতে পারবেনা। জনসমাগম হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও বিবাহ অনুষ্ঠান, জন্মদিন, বনভোজন এবং পর্যটন স্পটসমূহ বন্ধ থাকবে।
সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে। তবে ওষুধের দোকানসমূহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা যাবে। জরুরি পরিষেবা ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে অবস্থান করতে পারবেন না। হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকানসমূহ শুধু পার্সেল,
অনলাইন অর্ডার বা হোম ডেলিভারি সেবা দিতে পারবে। কোনও অবস্থাতেই এসব স্থানে বসে খাবার খাওয়া যাবে না। গণপরিবহনে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্ধারিত আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী বহণ করতে পারবে অটোরিকশা,সিএনজি ও রিকশা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুজন যাত্রী বহন করতে পারবে তব সামনের সিটে যাত্রী বহন করা যাবে না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সরকার কর্তৃক জারিকৃত অন্যান্য নির্দেশনাসমুহ এ বিধিনিষেধের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।এসব নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।