কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের নার্সদের অবহেলায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মৃত দুই শিশুর স্বজনসহ চিকিৎসারত শিশুদের অভিভাবকরা নার্সদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেঁটে পড়েন।
আজ সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে পৌঁছিলে মৃত শিশুদের স্বজন ও অন্যান্য শিশুদের অভিভাবকরা নার্সদের নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন।
বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত নার্সদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে মৃত শিশুর একজন জেলা শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছয়ানিপাড়ার দিলীপ চন্দ্র রায়ের কন্যা।
দিলীপ চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের জানান, গত শনিবার কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে তার স্ত্রী অঞ্জনা কন্যা সন্তান প্রসব করেন। সন্তান প্রসব স্বাভাবিক হলেও প্রসবের সময় শিশুটির মাথায় আঘাত পেয়েছে জানিয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
এরপর তাকে ইনজেকশন ও স্যালাইন দেওয়ারও ব্যবস্থাপত্র দেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। দিলীপ রায় বলেন, ওষুধ ও স্যালাইন নিয়ে এসে তা নার্সদের দিয়ে বাচ্চাকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তারা কথা শোনেন না।
তারা রুমে বসে মোবাইলে ফেসবুক চালান। এখনও স্যালাইন অমনি (অব্যবহৃত) পড়ে আছে। সোমবার দুপুরে বাচ্চার নাক থেকে অক্সিজেনের লাইন খুলে গেলে তা ঠিক করার জন্য নার্সদের ডাকি।
কিন্তু তারা ধমক দিয়ে আমাদের ফিরিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পরেই আমার শিশু কন্যা মারা যায়। নিজের বাচ্চার মৃত্যুর জন্য নার্সদের কর্তব্যে অবহেলাকে দায়ী করেন ভুক্তভোগী এই বাবা।
অন্যদিকে রাজিবপুর উপজেলা থেকে আসা মৃত শিশুর বাবা রবিউল ইসলাম জানান, ‘বাচ্চাকে চিকিৎসা সেবা, ওষুধ দিতে ডাকলে নার্সরা আসেন না। চিকিৎসার অভাবে কখন বাচ্চা মারা গেছে আমরা টেরও পাই নাই।
তারা (নার্সরা) মোবাইল নিয়া ব্যস্ত। রোগীর সেবা করতে তাদের অনীহা।রবিউলের বাবা (মৃত শিশুটির দাদা) ফুল মিয়া বলেন, ‘বাচ্চা মারা যাওয়ার পর নার্সরা আমাদেরকে বলে বাচ্চা রংপুর নিয়া যাইতে হবে। মরা বাচ্চা নিয়া আমাগো রংপুর যেতে বলেন।
এরা ইচ্ছা করে আমার নাতনিরে মেরে ফেললো। ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ শিশুর অভিভাবকদের অভিযোগ, নার্সরা ঠিকমতো ডিউটি করেন না তারা রুমে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোন সমস্যার কথা বললে অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন এমনকি চিকিৎসা না দেওয়ার হুমকিও দেন।
শিশু ওয়ার্ডে বিকাল শিফটে দায়িত্বরত নার্স তুলশি রানী ও উর্মিলা শাহা এসব অভিযোগের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। তারা বলেন, ঘটনার সময় যারা ডিউটিতে ছিলেন তারা ডিউটি শেষে চলে গেছেন।
নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ কাকলী বেগম বলেন, যে শিশু দুটি মারা গেছে তাদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। এরপরও নার্সদের কোন অবহেলা থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিশু ওয়ার্ডে ৪৮ রোগীর বিপরীতে ভর্তি আছে ১১৮টি শিশু। নার্স সংকট থাকায় অতিরিক্ত সংখ্যক রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে ডিউটিতে কিছুটা ভুল ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হানপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ লিংকন জানান, আমি বিষয়টি জানার পর শিশু ওয়ার্ডে গিয়েছি। শিশু দুটির শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শিশু দুটিকে রংপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তারা নিয়ে যাননি।
নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, রোগীর স্বজনরা বিষয়টি আমাকেও বলেছেন। প্রয়োজনে আমি তদন্ত কমিটি করে দেবো। সেবা দিতে গিয়ে যদি তারা রোগীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে সেটা কাম্য নয়। দায়িত্ব পালনে অবহেলাসহ, ভাষাগত কিংবা ব্যবহারগত বিষয়ে তারা যদি কোনও অপরাধ করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#