মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকাগুলোতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারীরা।
তারা সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে সুপারি, গরু, কাঠ, বাঁশ, পাথর, কয়লা ও কাপড়সহ নিষিদ্ধ মদ, ইয়াবা, গাঁজা ও অস্ত্র পাচাঁর করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্ভর) ভোরে তাহিরপুর সীমান্তের বালিয়াঘাট ও চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে ৩০মেঃটন চোরাই কয়লাসহ মদ,
গাঁজা ও ইয়াবা পাচাঁর করে ২টি ইঞ্জিনের নৌকায় বোঝাই করে পাটলাই নদী পথে কমলাকান্দা নিয়ে গেছে চোরাকারবারী খোকন মিয়া ও শহিদুল্লাহ। কিন্তু এব্যাপারে কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানাগেছে।
তবে গতকাল বুধবার (২২ সেপ্টেম্ভর) পৃথক অভিযান চালিয়ে ভারতীয় ৬৭ বোতল মদের চালানসহ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বনগাঁও সীমান্ত থেকে মাদক ব্যবসায়ী প্রদীপ চন্দ্র দাস (১৯) ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর
ইউনিয়নের মধ্যধনপুর গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী (৩৮) কে আটক করে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। তার মধ্যে শুক্কুর আলীকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।
আর প্রদীপ চন্দ্র দাসের নামে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্ভর) দুপুরে ২মাদক ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী ও প্রদীপ চন্দ্র দাসকে পৃথক ভাবে কারাঘারে পাঠানো হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে- জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর , মধ্যনগর, তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকাগুলোতে চোরাকারবারীরা সিন্ডিকেডের মাধ্যমে সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবাধে সুপারি,
গরু, কাঠ, বাঁশ, পাথর, কয়লা ও কাপড়সহ নিষিদ্ধ মদ, ইয়াবা, গাঁজা ও অস্ত্র পাচাঁর করছে। তার মধ্যে তাহিরপুর সীমান্তের বালিয়াঘাট ও চাঁরাগাঁও সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী ইয়াবা কালাম, রমজান মিয়া,
শফিকুল ইসলাম ভৈরব, মানিক মিয়া, একদিল মিয়া, খোকন মিয়া, শহিদুল্লাহ, কদ্দুস মিয়া, বাবুল মিয়া, হারুন মিয়া, আনোয়ার মিয়া, লেংড়া জামালগং প্রতিদিন ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা, কাঠ,
বাঁশ ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করছে। একই ভাবে বীরেন্দ্রনগর, টেকেরঘাট, চাঁনপুর ও লাউড়গড় সীমান্ত এলাকা দিয়েও চলছে জমজমাট চোরাচালান বাণিজ্য।
এব্যাপারে সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী সাবজল হোসেন বলেন- আজ বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্ভর) ভোরে তাহিরপুর সীমান্তের বালিয়াঘাট ও চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে চোরাই কয়লা পাচাঁর করে ২টি ইঞ্জিনের নৌকায় বোঝাই করে
চোরাকারবারী খোকন মিয়া ও শহিদুল্লাহ পাটলাই নদী দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সমসার হাওরের তেঘরিয়া এলাকায় কয়লা আমদানী কারক সমিতির পাহারাদার (সেন্টি) কংকন মেম্বার ও কাহার মিয়াসহ ৫জন মিলে আটক করে।
পরে তারা প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর না করে ২ নৌকা থেকে ১০হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে আমার সোর্সরা আমাকে জানিয়েছে। আর কয়লা পাচাঁরের খবর আমিই সেন্টিদেরকে জানিয়ে ছিলাম।
এব্যাপারে সেন্টি কাহার মিয়া বলেন- এসব নিয়ে লেখালেখি করা দরকার নাই, দেখছি কি করা যায়। তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও গ্রামের ব্যবসায়ী সুহেল মিয়া বলেন- শুল্কস্টেশন এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী আনোয়ার মিয়া চাল,
চিনি ও মদসহ বিভিন্ন মালামাল ওপেন পাচাঁর করে তার দোকানে মজুত করে বিক্রি করাসহ বিভিন্নস্থানে পাঠায়। আমি বিজিবিকে জানানোর পর তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি বরং আমি অপমানিত হয়েছি।
কারণ বিজিবির সাথে ওদের সু-সম্পর্ক। এই উপজেলার লাউড়গড় গ্রামের রফিক মিয়া ও আমিনুল মিয়া বলেন- আমরা এখন আর বিজিবির সোর্স হিসেবে কাজ করিনা।
তবে অনেকেই বিজিবিকে সাথে নিয়ে লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী দিয়ে প্রতিদিন কয়লা ও পাথরসহ গাছ পাচাঁর করছে। তার মধ্যে পাঁচারকৃত গাছ বিন্নাকুলী, বালিজুরী ও বাদাঘাট বাজারের কয়েকটি মিলে নিয়ে মজুত করে বিক্রি করা হয়।
এব্যাপারে গতকাল বুধবার (২২ সেপ্টেম্ভর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজেদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন- ভারত থেকে সীমান্ত পথে অবৈধ ভাবে সুনামগঞ্জে মাদক প্রবেশ করছে।
পরে সেই মাদক চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে মাদকসহ বাহকরা ধরা পড়লেও মূলহোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাহিরে। আমরা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত মূল হোতাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এসহান সাংবাদিকদের বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের সঠিক তথ্য পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তবে চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।