মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, রায় জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে নোয়াখালী সদর উপজেলার সাবেক সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার কবির আহাম্মদকে ২৩ বছর ও সামছুল হক প্রকাশ সামছু উদ্দিনকে নামে এক ব্যক্তিকে ১৮
বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এবং অভিযুক্ত প্রত্যেককে ১ লক্ষ ৫হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ মাসের কারাদন্ডাদেশ হয়েছে।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নোয়াখালী স্পেশাল জজ আদালত-১ এর বিচারক এ.এন.এম মোরশেদ খান ওই রায় দেন। আসামিরা হলেন,
সদর উপজেলার সাবেক সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার কবির আহাম্মদ ও অপর আসামি সামছুল হক প্রকাশ সামছু উদ্দিন। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্ত দুইজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানাগেছে, নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার পশ্চিম চর জব্বর মৌজার ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত ৬০১/৮৯ দাগে ১.৫ একর; ৬০১/৮৮/১ দাগে ১.০৪ একর; ৬০১/৯৭ দাগে ০.৪৬ একর; ৬০১/৮৯ দাগে
১.০০ একর; ৬০১/৯৭ দাগে ০.২০ একর; ৬০১/১০৩ দাগে ০.৩০ একর সহ মোট ৪.৫০ একর ভূমির আবু তাহের গং মালিক ও দখলকার অত্র অভিযোগের বাদী পক্ষ।
উক্ত ভূমি চলমান বাংলাদেশ জরিপে ভুলে ২নং আসামীর নামে ৯৭১ নং ডিপি খতিয়ানে রেকর্ড হলে বাদীপক্ষ ঝঅঞ অপঃ এর ৩১ বিধি মোতাবেক সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসে ২৩২৪৯/২০১২ নং আপীল মামলা দায়ের করা হয়।
উক্ত আপীল মামলায় বিবাদী পক্ষের নাম কর্তণ পূর্বক বাদী পক্ষের নাম লিপিবদ্ধ করন ও তামিল খতিয়ান প্রদানের আদেশ হয়। সে মোতাবেক ১নং বিবাদী বাদীপক্ষের নামে ০১- ০৪-২০১৩ খ্রিঃ তারিখে তামিল খতিয়ান ইস্যু করেন।
১০-০৬-২০১৩ খ্রিঃ তারিখে ৭১৮৯৬ নং দরখাস্তের মাধ্যমে জাবেদা নকল পাওয়ার আবেদন করলে ৪ পাতার ১টি জাবেদা নকল সরবরাহ করা হয়।
গত ০২-০৮-২০১৩ খ্রিঃ তারিখে ১নং বিবাদী বাদীর নিকট থেকে সংশোধনের কথা বলে সরবরাহকৃত জাবেদা নকল ও তামিল খতিয়ানের মূলকপি নিয়ে যায়। উক্ত রেকর্ড ফেরত চাইলেও ১নং বিবাদী আর ফেরত দেয়নি।
অতঃপর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের নোটিশ প্রাপ্ত হয়ে ২৯-০৯-২০১৪ খ্রিঃ তারিখে উক্ত দপ্তরে হাজির হয়ে বাদী জানতে পারেন যে,
কবির আহাম্মদ জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সরকারী রেজিষ্ট্রার ও মামলার নথিতে থাকা রায় পরিবর্তন করে ২নং বিবাদীর নামে রেকর্ড বহাল করেন।
এভাবে বিবাদী দন্ডবিধির ১৬৭/৪২০/৪৬৬/৪৬৮/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বিধায় বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত, নোয়াখালী-এ পিটিশন মামলা নং ০১/২০১৪ খ্রিঃ রুজু করা হয়।
তদন্তে জানা যায়, নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার তৎকালীন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার কবির আহাম্মদ নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়ের ২৩২৪৯/১২ নং আপীল মামলায়
আপীলকারী আবু তাহের গংদের নামে আপীল মঞ্জুর করে নিজ স্বাক্ষরে তাদের নামে খতিয়ান ও অর্ডারসীটের সার্টিফাইড কপি তৈরী করে সরবরাহ দিয়েছেন।
পরবর্তীতে প্রতারণামূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিবাদী সামছুল হক প্রকাশ সামছু উদ্দিন কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে তার কর্তৃক প্রদত্ত আপীল মঞ্জুর আদেশ সীট পরিবর্তন করে তাতে আপীল না মঞ্জুর লিখে ডিপি খতিয়ানের
সরকারী রেকর্ড কাটাকাটি করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন এবং সামছুদ্দিন গং নামে খতিয়ান ও আদেশের সার্টিফাইড কপি নিজ স্বাক্ষরে তৈরী করে সরবরাহ করেছেন।
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সামছুল হক ওরফে সামছু উদ্দিন আপীলের বিবাদীপক্ষে থেকে হেরে গিয়ে ৪২ ধারার ক্ষমতাবলে জোনাল সেটেলম্যান্ট অফিসারের নিকট আপীল না করে আপীল অফিসারকে প্রভাবিত করে আদেশ
সংশোধনের আইনগত ক্ষমতা না থাকার পরও আদেশ সংশোধন করিয়ে আদেশের সার্টিফাইড কপি এবং খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি গ্রহণ করেন।
এভাবে আসামী (১) নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার তৎকালীন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার কবির আহাম্মদ ও (২) সামছুল হক ওরফে সামছু উদ্দিন দ্বয় অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও
জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারী রেকর্ড বিনষ্ট করে আপীল আদেশ দেয়ার পর পুনরায় ক্ষমতা বর্হিভূত আদেশ পরিবর্তন করে রেকর্ড সৃষ্টি করে দন্ডবিধি’র ১৬৭/২০১/৪২০/৪৬৬/৪৬৮/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২)ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় ওই রায় প্রদান করা হয়।