আল হেলাল চৌধুরী,দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভার একমাত্র ‘কানাহার কবরস্থান’ টি ক্রমান্বয়ে পুকুরে গ্রাস করছে। কানাহার পুুকুর পাড়ে ‘কানাহার কবরস্থান’ পৌরসভার আন্ডারে; অপরদিকে পুকুরটিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হয়ে মাছ চাষ করায় কবরস্থান ভেঙে বাপ-দাদার স্মৃতি বিজড়িত কবরগুলো বিলীন হতে বসেছে।
জানা যায়, ০৯ একর ৪৩ শতাংশ জায়গা নিয়ে কানাহার পুকুর এবং ০২ একর ৯০ শতাংশ জায়গা নিয়ে কানাহার কবরস্থানটি উল্লেখ থাকলেও কবরস্থানটি প্রকৃতপক্ষে পুরো পুকুরের চার পাড় জুড়েই কবরস্থান। তা আনুমানিক ১৫ একরেরও বেশি জায়গা হবে।
এখানে মাছ চাষের জন্য ফুলবাড়ীর সবচেয়ে বড় পুকুর হিসেবে খ্যাত ‘কানাহারপুকুর’। যার থেকে লাখ লাখ টাকা আয় হয়। পশ্চিম গৌরীপাড়া ও পূর্বগৌরীপাড়া, নিমতলা, বুন্দিপাড়া, স্বজনপুকুর, রেলঘুমটি, ডাঙ্গা, বারোঘরিয়া, কাঁটাবাড়ী,
ফুলবাড়ী বাজার, নিমতলামোড়সহ ফুলবাড়ী পৌর শহরের অধিকাংশ মানুষের মৃত্যুর পর কবর দেয়ার একমাত্র কবর স্থান এটিই। একদিকে কবরস্থানের পাড় ভেঙে যাচ্ছে, অপরদিকে ট্রাক-ট্রলার পরিষ্কার করার স্থান করেছে।
তার সাথে অবাধে চলছে গরু-ছাগল-হাঁস পালনের চেষ্টা। সব মিলে কবরস্থানের যে পবিত্রতা তা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন।
পুকুরটি ক-তফশীলভুক্ত ভিপি সম্পত্তি হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন পুকুরটি ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে ফুলবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে মাছ চাষ করতে দিয়ে আসছেন।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পুকুরটি সাব কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে ৮/১০ লাখ টাকায় জনৈক মাছ চাষিকে দিয়ে মোটা অংকের টাকা তুলছেন। এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমেও কানাহার পুকুর অথবা কবরস্থানের কোন প্রকার সংস্কার কাজ লক্ষ্য করা যায়নি।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক খায়রুল আনাম, আতিয়ার রহমান, এ্যাডভোকেট আবুহেনা, সাখাওয়াত কাজি, আলাউদ্দীন মিস্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, পুকুরের লাখ লাখ টাকায় কবরস্থান সংস্কার করা যেত।
এপর্যন্ত প্রায় দু’শতাধিক কবর পুকুরের পেটে চেলে গেছে। আর কতখানি ভাঙলে নজরে আসবে কর্তৃপক্ষের? যে বিষয়টি অনেককে ভাবায়, আমার বাপ-দাদার কবরের পাশে আমার কবর দেওয়ার জায়গাটা অবশেষে থাকবে তো ?
সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো.এছার উদ্দীন বলেন, জিয়ার আমলে কানাহার পুকুরটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বরাদ্দ দেন উপজেলা প্রশাসন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জনৈক ব্যক্তিকে লিজ দিয়ে সেই টাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামনের দু’শতক জমি ক্রয় করে রাস্তা করি, খাজনা দেই, কারো সমস্যায় এ টাকা খরচ হয়।
পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, কানাহার কবরস্থান রক্ষণাবেক্ষণ করবে পৌরসভা আর পুকুর থাকবে অন্য প্রতিষ্ঠানের হাতে তাতো হয়না। এতে সমন্বয়হীনতায় কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় এই বিষয়টি নিয়ে আমাকে অনেকে অভিযোগ করেছেন। তবে কেন্দ্রীয় কবরস্থানকে পুকুর যে গ্রাস করছে, তা সত্য। নাগরিক সেবা দেয়ার ব্যাপারে আমি
জনগণের দাবির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) এবং মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার- এর দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. রিয়জ উদ্দীন বলেন, ইতোমধ্যে মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। সামনে এডিবি বরাদ্দ আসছে
এবং বরেন্দ্র, মৎস্য থেকে তালিকা চেয়েছে যেসব পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে। কানাহার পুকুরটি সে তালিকায় আছে। ধর্মীয় জনগুরুত্বপূর্ণ কবরস্থানকে বিলীন হতে দেয়া যাবে না। আমি বিষয়টি নিয়ে যথাস্থানে আলোচনা করবো।