কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে বাস্তুহারা হয়ে পরেছে অনেক পরিবার। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাটে ব্রহ্মপুত্রের আগ্রাসনে
বাস্তুহারা হয়েছে ওই এলাকার অন্তত এক হাজার মানুষ। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কয়েক শত পরিবার।
এছাড়াও, কড্ডার মোড়সহ ঐ এলাকার শতাধীক বাড়ী-ঘর নদের তীব্র ভাঙনে সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা। হুমকির মুখে পরেছে কয়কটি স্থাপনা ও ফসলি জমি।
নদের গর্ভে বিলীনের অপেক্ষায় মোল্লারহাট বাজার। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গত বর্ষায় বাজার রক্ষায় কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করলেও তা খরস্রোতে নদের গর্ভে চলে গেছে।
তীব্র ভাঙন চললেও সবকিছুকে উপেক্ষা করে বাজারের কাছেই চলছে অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন। এতে ভাঙনের ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ছয়বার বাড়ী সরিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা আরমান আলী। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে তিনি ভিটে সরিয়ে অন্যত্র নিয়েছেন। আরমান আলী বলেন, ‘ছয়বার বাড়ি সরাই,
বুকের ভিতরটা ভাঙি যায়। এতোবার ভিটা ভাঙে, তাও কাইয়ো শোনে না-দেখে না। আমরা খুব অসহায়।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে একই কথা বললেন, ঐ এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী মজিবর রহমান।ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে সর্বহারা হয়ে এখন ফকির হতে হয়েছে অনেক কে।
বাড়ি-ঘর সরাতে সরাতে হাফসি গেছে মজিবর, সেকেন্দার, সোহাগসহ ভুক্তভোগীরা। জানাগেছে, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির
ভাগ অংশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। ছয় মাসে অন্তত আট শতাধিক পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। আবাদি জমি বিলীন হয়েছে অন্তত হাজার একর।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘গত ছয় মাসে ব্রহ্মপুত্র আর ধরলার ভাঙনে অন্তত ১ হাজার ২০০ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। একদিকে ব্রহ্মপুত্র নদ অন্যদিকে ধরলা নদীর ভাঙনে মানুষ
দিশেহারা হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে ইউনিয়নটি মানচিত্র থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।
এদিকে ভাঙনের খবর পেয়ে সম্প্রতি ওই এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমি মোল্লারহাটে গিয়েছি।
বাজার টেকানোর জন্য যা করার তা করতে হবে। বড় ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে বাজার এ বছরই বিলীন হয়ে যাবে।
ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেছি। পাশাপাশি আমি বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করব।
কুড়িগ্রাম পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে আমরা প্রকল্প প্রস্তাব পাঠাবো। প্রকল্প অনুমোদন হলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেব।’ এছাড়া, বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। #