মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ফারুখ শামীম বলেছেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরের মানুষকে খুব ভালবাসেন, সারাক্ষণ তাদের
কথা চিন্তা করেন। তাই হাওরের জীবন মান উন্নয়নের জন্য নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন- আগাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ, হাওরের পানি নিষ্কাশন ব্যবহার উন্নয়ন ও নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সুনামগঞ্জে ২টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
১টি হলো খাল খনন অন্যটি হলো কজওয়ে নির্মাণ। কৃষকরা তাদের ফসল যাহাতে ঘরে নিয়ে যেতে পারে সেজন্য ৯০টি কজওয়ে রাখা হয়েছে।
শুষ্ক মৌসুমে কজওয়ের পয়েন্টগুলো জিও ব্যাগ দিয়ে বন্ধ রাখা হবে। যখন কৃষকরা তাদের উৎপাদিত হাওরের ফসল কাটা শেষ করবে তখন কজওয়েগুলো খুলে দেওয়া হবে। এই
কাজগুলো করা হলে আগামীতে এবছরের মতো আগাম বন্যা হলে তা মোকাবেলা করতে পারবো।
তিনি আরো বলেন- ১৫৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি নদী ও তার সঙ্গে যত সংযোগ খাল রয়েছে তা খননের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বছরের শেষে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে।
এজন্য প্রকল্প গুলো নিয়ে সমীক্ষার কাজ চলছে। এরপর সেপ্টেম্ভর মাসের ভিতরে আমরা প্রতিবেদন পাবো। তারপর একনেকে এসব প্রকল্প পাস করাবো।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ফারুখ শামীম বলেন- এবছর ২০১৭ সালের চেয়ে পানির পরিমান বেশি হয়েছে। কিন্তু বাঁধের কাজের মান ভালো হওয়ায় সেই ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল হয়েছে। সেখানে এপর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। এটা ২ লাখ ২৩ হাজারের মধ্যে কোনো পার্সেন্টেজের ভেতরে আসেনা। এতে চালের দাম বাড়বে না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন- এব্যাপারে মিডিয়ার ভাইদের এখন অনেক দায়িত্ব আছে। আপনারা যদি হাওরের বিষয় নিয়ে এখন ফুলায়ে-ফাঁপায়ে অন্যভাবে সংবাদ প্রকাশ করেন, তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দেবে।
হাওর এলাকায় এধরনের দূর্যোগ আসতেই পারে। আমরা কিন্তু পিছিয়ে যাইনি। এই দূর্যোগ আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করছি এবং করব।
হাওর পরিদর্শনের সময় প্রতিমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার
গোস্বামী, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার উজ-জামান, ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন প্রমুখ।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়- সুনামগঞ্জ জেলায় এবার ১৩৭টি ছোট-বড় হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে।
এপর্যন্ত ৮৪ হাজার ৭৪৮ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিকটন।
তবে সুনামগঞ্জে এবার প্রথম দফা পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করে ৩০ মার্চ থেকে। এতে জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানির পরিমান প্রচুর বৃদ্ধি পায়। এতে করে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে হাওরের বোরো
ফসল। পাহাড়ি ঢলের পানি উপছে পড়ে ও বাঁধ ভেঙ্গে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭টি হাওরের ৫ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে স্থানীয় কৃষকরা বলেছেন- ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরো বেশি।