যারা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তাণ্ডব চালায়, যারা এদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে না তাদের এদেশে থাকার কোনো অধিকার নেই। হেফাজতে ইসলাম আসলে তারা ইসলামের শত্রু। যারা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এ ধরনের জঘন্য কাজ করে তারা বাংলাদেশের শত্রু, স্বাধীনতার শত্রু, জনগণের শত্রু, তারা ইসলামেরও শত্রু। তাদের মনে রাখতে হবে এটা তালেবান রাষ্ট্র নয়, এটা পাকিস্তান রাষ্ট্র নয়, সন্ত্রাসী জঙ্গিদের বাংলার মাটিতে কোন স্থান নেই। সরকারকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর জন্য আমরা অনেক কিছু সহ্য করে গেছি আর কোন কিছু সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ার দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
শনিবার (৩ এপ্রিল) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলেন শেখ সেলিম। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন।
শেখ সেলিম বলেন, যারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে নাই, সেই শক্তি আমাদের এই সুন্দর অনুষ্ঠানকে কলঙ্কিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারীতে তাণ্ডব চালায়। তারা থানায় আক্রমণ করে, পুলিশের ওপর আক্রমণ করে, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়, ভূমি অফিস এবং বিভিন্ন স্থাপনা তারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি যারা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস রাখে তারা কোনদিন এই জঘন্য কাজ করতে পারে না।
তিনি বলেন, গত ২৭ মার্চ তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, এসপি অফিস, থানায় আগুন দেয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল পর্যন্ত তারা ভাঙচুর করে এবং আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রেসক্লাবে আগুন দিয়ে তারা প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজুদ্দিন জামিলসহ ১১ জন সাংবাদিককে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভনের বাড়িতে আগুন দেয় এবং আমাদের কোরআন শরীফকে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ, বসুন্ধরা এবং ৩০০ ফিট রাস্তায় ওখানে স্থাপনায় আগুন দেয় ও গাড়ি ভাঙচুর করে। হেফাজতে ইসলাম আসলে ইসলাম বিরোধী। ইসলাম কেবল হেফাজত করতে পারে আল্লাহ, জঙ্গিদের দ্বারা ইসলাম হেফাজত হতে পারে না।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, এই জঙ্গিরা তলোয়ার নিয়ে যেভাবে ঘোড়ার ওপর উঠে পিছনে শত শত জঙ্গিদের এবং সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র দিয়ে তারা সাধারণ মানুষ হত্যা করার জন্য এবং স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য তাণ্ডব চালিয়েছিল। তাদের ছবি দেখলে মনে হয় প্রাচীনকালের কোন যুদ্ধে যাচ্ছে। তাদের মনে রাখতে হবে এটা তালেবান রাষ্ট্র নয়, এটা পাকিস্তান রাষ্ট্র নয়, সন্ত্রাসী জঙ্গিদের বাংলার মাটিতে কোন স্থান নেই। সরকারকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর জন্য আমরা অনেক কিছু সহ্য করে গেছি আর কোন কিছু সহ্য করা হবে না।
তিনি আরও বলেন, ২৭ মার্চ বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। তারা শুধু আক্রমণ করে নাই ১০ জন পুলিশকে বোমা মেরে আহত করেছে। পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ করে পুড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি-হেফাজতের সমর্থকেরা।
শেখ সেলিম বলেন, তারা সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে ধর্মভীরু মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। এরা রাষ্ট্রবিরোধী, ইসলামবিরোধী। এরা সন্ত্রাসী, এরা জঙ্গি, রাষ্ট্রের শত্রু, মানবতার শত্রু, দেশের শত্রু। এদেরকে কোন ছাড় দেওয়া যেতে পারে না। বাংলাদেশ কিছু জঙ্গি, সন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধীরা আছে তারা পাকিস্তানে নিয়াজি ও তালেবানের অনুসারী এরা স্লোগান দিয়েছে আমরা সবাই তালেবান বাংলা হবে আফগান। হেফাজতের নামে যারা জঙ্গি সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত হয় এবং বিএনপি-জামায়াত তাদের সহযোগী হিসেবে যারা ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে এবং তারা কোনভাবেই ইসলামকে হেফাজত করতে পারে না, ইসলামকে হেফাজত করবে আল্লাহ।
তিনি বলেন, যারা বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, আমাদের অর্জন, গৌরব এটাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দরকার হলে ট্রাইবুনাল করে অবিলম্বে তাদের বিচার করতে হবে। হেফাজতের জঙ্গিরা মাদরাসা থেকে বের হয়ে যারা রাস্তায় মানুষকে হত্যা করে মানুষের বাড়িঘর আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়, স্থাপনা নষ্ট করে সেইসব মাদরাসা বন্ধ করে দিতে হবে।
শেখ সেলিম বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের জঙ্গি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল অতিসত্বর সেই মামলা তদন্ত করে সেই সময় যাদের নামে মামলা হয়েছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে, বাবুনগরী না শহর নগরী। রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশে অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদিন পরিশ্রম করে বাংলাদেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে যখন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে আন্তর্জাতিকভাবে যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়ে গেছে ঠিক তখনই সেই অপশক্তি আবার এই কাজ করছে। পৃথিবীতে কোথাও নাই স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি করে। বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। যারা এই দেশটাকে ধ্বংস করতে চায়, দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে, এদের কোন ক্ষমা নাই। বঙ্গবন্ধু ক্ষমা করেছিলেন মহানুভবতার কারণে, তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে কঠোর হতে হবে। আপনার পিছনে ১৪ কোটি স্বাধীনতাকামী মানুষ আছে। এই অপশক্তিকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। যারা এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানে না যারা বাংলাদেশকে স্বীকার করতে পারছে না, তাদের বাংলাদেশে থাকার কোন অধিকার নাই।