মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় গ্রেনেড হামলার চা ল্যকর ঘটনায় সিআইডির সাজানো নাটকে গ্রেফতার হওয়া নায়ক সেনবাগের জালাল আহম্মদ প্রকাশ জজ মিয়ার মামলার খরছ চালাতে গিয়ে পৈত্রিক ভিটেমাটি হারিয়ে আজ সর্বস্ব জজ মিয়া।
বর্তমানে স্ত্রী,এক মেয়ে,ছোট বোন ও ভাইকে নিয়ে ঢাকার নারায়নগেঞ্জ বাসা ভাড়া করে বসবাস করছেন সে।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় জজ মিয়াকে বিনা অপরাধে চার বছর ২ মাস ২৫ দিন কারাভোগ করতে হয়েছিল এতে তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে উল্লেখ করে গত (১১ আগষ্ট) বৃহস্পতিবার তাঁকে ১০ কোটি টাকা
ক্ষতিপূরণ দিতে ১৫দিনের সময় দিয়ে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফজ্জামান বাবর, পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক খোদা বকশ চৌধুরী, সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশীদ, মুন্সী আতিকুর রহমান ও সাবেক
বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ রুহুল আমিন সহ ১১ ব্যক্তি বরাবর ওই আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ কাউছার ।
১৯ আগষ্ট শুক্রবার সকালে জজ মিয়ার পরিবারের খোঁজখবর নিতে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ২নং কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট গ্রামের টেন্ডল বাড়িতে গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
তাদের ঘরে বসবাস করেন সত্তরোর্ধ ছেমনা খাতুন নামের এক নারী। তিনি জানান, জজ মিয়াদের ওই জায়গাটি তার ছেলে রফিকুল ইসলাম কিনে নিয়েছেন।
ওই মহিলার সঙ্গে আলাপ করে জানাযায়, ২০০৯ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে জজ মিয়া গ্রেনেড হামলার মামলায় গ্রেফতার হবার পর ঢাকা নোয়াখালী দৌড়াদৌড়ি করতে ও মামলার খরছ চালাতে গিয়ে অভাব অনটনের কারণে তার
মা জোবেদা খাতুন ও তার বোন খুরশিদা বীরকোট গ্রামের বাড়ির ভিটেমাটি বিক্রি করে ঢাকায় চলে যান। বর্তমানে ওই বাড়ি বা এলাকার জজ মিয়ার পরিবারের কেউ থাকে না।
এদিকে, জজ মিয়া ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান। দীর্ঘ ৪বছর ২ মাস ২৫ দিন কারাবাসের পর একই বছর ৫ সেপ্টেম্বর পিতার কবর জিয়াররত করতে গ্রামের বাড়িতে এসে আত্মীয়ের ঘরে ওঠেন এরপর আর গ্রামের বাড়িতে আসা হয়নি তার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ১১ জুন আদালতে সিআইডির দাখিল করা চার্জশীটে ২২জনকে আসামী করা হলেও অব্যাহতি দেয়া হয় জজ মিয়াকে। তখন জজ মিয়ার মুক্তির বিষয়টি আটকে যায় ঢাকার সুত্রাপুর থানায় দায়ের
করা বিষ্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় (যার নং ১০৮, তারিখ-২৭-১২-৯৮)। এ মামলায় কোন দিন জজ মিয়াকে আদালতে হাজির না করা হলেও ২০০৫ সালের ২ নভেম্বর আদালত তাকে ৭ বছরের কারাদন্ড আদেশ দেয়।
পরিবারের বর্তমান অবস্থান জানতে ফোনে কথা হয় জজ মিয়ার সাথে তিনি জানান তার মা জোবেদা খাতুন আমাকে জেল থেকে ছাড়ানোর দৌড়াদোড়ি করতে গিয়ে পৈত্রিক ভিটেমাটিও বিক্রি করে দিয়েছে। বর্তমানে তারা ভিটেমাটি হারা। বিগত ৫বছর আগে তার মা অসুস্থ্য হয়ে মারা যান।
মিথ্যা মামলায় তার গায়ে সন্ত্রাসী তকমা লাগার কারনে তিনি কোথায় গিয়ে কোন চাকুরী করতে গেলে কেউ চাকুরী দিতে ও কাজ দিতে চায়না। ওই সন্ত্রাসী তকমার কারনে ছোট খুরশিদাকে আজ পর্যন্ত বিয়ে দিতে পারেনী। তার বোনের বর্তমান বয়স প্রায় ২৫ বছর।
জজ মিয়া আক্ষেপ করে বলেন পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করার কারনে বর্তমানে তারা ভিটেমাটি হারা। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট মাথা গোঁজার জন্য একটু জায়গার দেওয়ার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
জজ মিয়া ক্ষোভের সাথে বলেন, আমার জীবন থেকে চারটা বছর এবং মাকে হারাইলাম, আমি স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য সবার সহযোগীতা চাই। সিআইডির পক্ষ থেকে বাড়িতে গিয়েও তদন্ত করলো অথচ এখন কেউ খবর রাখে না।
বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জজ মিয়া জানান, তিনি নারায়নগঞ্জে স্ত্রী, ১মেয়ে ও ছোট বোন আর ছোট একটা ভাইকে নিয়ে ঘরভাড়া করে থাকেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার মহাখালী টিবি হাসপাতাল ও শেখ রাশেল হাসপাতালে টুকটাক খাদ্য সরবরাহের কাজ করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন-বিগত ৫বছর আগে প্রধানমন্ত্রী তাকে দুই লক্ষ টাকা অনুদান
দিয়ে ছিলেন। কিন্তু ওই টাকা তার মায়ের চিকিৎসা করাতে শেষ হয়ে গেছে। গ্রেফতার পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, সিআইডি অফিসে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের শেখানো জবানবন্দী ভিডিওতে ধারণ করা হয়।
পরে ভিডিও দেখিয়ে বলা হয় তাদের কথামতো স্বাক্ষী দিলে মামলা শেষে তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হবে তার কিছুই হবে না। পর্যায়ক্রমে সে পরিবারের সদস্যদেরও বিদেশ নিয়ে যেতে পারবে।
আর সিআইডির কথামতো স্বাক্ষী না দিলে তাকে ক্রসফায়ার অথবা এই মামলায় ফাঁসি দেয়া হবে। মা এবং অন্য ভাই বোনদেরও হত্যাসহ নানা মামলায় জড়ানো হবে। এজন্যই তাদের কথা মতো তিনি স্বাক্ষী দেন যার বিনিময়ে সিআইডি
তার মা ও বোনকে প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা করে দিতো এবং মাঝে মধ্যে জেলে গিয়ে সিআইডি কর্মকর্তারা খাবার ও জামা-কাপড় দিয়ে আসতো তাকে। এখন সত্য ঘটনা ঠিকই বের হইছে এখন আমি সরকারের সহযোগীতা চাই।
প্রসঙ্গত; ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২২জন নিহত হন। ওই মামলার প্রায় সাড়ে ৯মাস পর ২০০৫ সালের ৯ জুন ঢাকা সিআইডি’র
অনুরোধে সেনবাগ থানার তৎকালিন এএসআই কবির আহম্মেদ গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) মোকলেছুর রহমানের সহায়তায় উপজেলার বীরকোট গ্রামের রাজা মিয়ার চা দোকান থেকে জজ মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরে সেনবাগ
থানা থেকে সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। এর কয়েক দিনের মাথায় জজ মিয়া ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পায়। শুরু
থেকেই এ গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়। ওই মামলায় প্রথমে শৈবাল সাহা পার্থ, পরে আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেসুর রহমানকে ফাঁসাতে না পেরে নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে ধরে আনা হয় মোঃ জালাল আহম্মেদ প্রকাশ জজমিয়াকে। তাঁকে দীর্ঘদিন রিমান্ডে রেখে ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে একটি সাজানো জবানবন্দি আদায় করা হয়।