প্রতিবার বিশ্বকাপের শেষ দিকে এসে যেমনটি বলে থাকেন ফিফা সভাপতি, গতকালের সংবাদ সম্মেলনেও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও। সফল হয়েছে কাতার বিশ্বকাপ, প্রথমবারের মতো কোনো আফ্রিকান দল সেমিতে উঠেছে, প্রথমবার কোনো নারী রেফারি ম্যাচে বাঁশি বাজিয়েছেন- ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোর সব পয়েন্ট নোটবুকে টুকেই দীর্ঘশ্বাস আর্জেন্টাইন এক সাংবাদিকের, ‘এই বিশ্বকাপ তখনই সফল হবে রোববার যখন ফুটবল ঈশ্বর মেসির হাতে ওই ট্রফিটি তুলে দেবেন …।’ এই মুহূর্তে দোহার মনের ভাষাও বুঝি এমনই।
সবাই ধরেই নিয়েছে, কাপ নেবে আর্জেন্টিনা! কিন্তু এই গণবিশ্বাসে গা ভাসাতে পারছেন না আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি। গতকাল মিডিয়ার জন্য দরজা বন্ধ রেখে অনুশীলন করান তিনি।
চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে আটকানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ছকে আটকে থাকলে যে চলবে না- সেটা অন্যদের চেয়ে ঢের জানা আর্জেন্টাইন কোচের। এটাও জানা আছে, তাঁর কৌশলগুলো যেন কোনোভাবেই বাইরে প্রকাশ না পায়। তার পরও কাতারে আসা আর্জেন্টাইন সাংবাদিকরা স্কালোনির তিনটি ছক নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইভ দিয়ে যাচ্ছেন। যার একটি ছক ৪-৪-৩। তিন ফরোয়ার্ড নিয়ে স্কালোনির এই আক্রমণাত্মক ছকে মেসিকে রাখা হবে সবার সামনে। তাঁর বাঁ পাশে জুলিয়ান আলভারেজ আর ডানে ডি মারিয়া। রক্ষণাত্মক ৫-৩-২ ছকে ডি মারিয়া নেই। সেখানে ডিফেন্সে পাঁচজন। শুরুতে গোল পেয়ে গেলে এই ছকে যেতে পারেন স্কালোনি।
আর তৃতীয় ছকটি ৪-৪-২। সেখানেও থাকবেন না ডি মারিয়া।
আসলে স্কালোনিকে ভাবতে হচ্ছে এমবাপ্পেকে আটকানোর উপায়টা ঠিক কী। ফরাসি এই ফরোয়ার্ড এতটাই ক্ষিপ্র, তাঁকে বিশ্নেষণ করে নাকি এটা আবিস্কার করেছেন স্কালোনি, মাত্র ২ থেকে ৩ সেকেন্ডের মধ্যেই সে বল কেড়ে ঝড়ের গতি ছোটাতে পারেন! ফরাসি স্ট্রাইকার জিরুদ এই বিশ্বকাপের অন্যতম সফল স্কোরার। পোস্টের যে কোনো অ্যাঙ্গেল থেকেই সে নির্ভুল শট নিতে পারে। আর মিডফিল্ডার গ্রিজম্যান মাত্র তিন পাসে ডি বক্সে বল পাঠাতে পারেন।
সূক্ষ্ণ এই বিশ্নেষণগুলো নাকি ক্যাম্পের বাইরে থেকে একজন করেছেন এবং সেটা জানিয়েছেন স্কালোনির অ্যাসিস্ট্যান্টকে। সেই বাইরের লোকটি হচ্ছেন সার্জিও আগুয়েরো। তাঁর ব্যাপারে মেসি এবং আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থা এতটাই খুশি, ফাইনালের আগে তাঁকেও ক্যাম্পে ডাকা হয়েছে। আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় এক চ্যানেল জানাচ্ছে, আগুয়েরো নাকি তাঁর পুরোনো টিমমেট মেসির সঙ্গে আগের মতোই রুম শেয়ার করে থাকবেন।
বিশ্বকাপে মেসির শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগে ফাইনালের সব মঞ্চ যেন প্রস্তুত করে রেখেছে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সও পিছিয়ে নেই। ইনজুরির কারণে স্কোয়াড থেকে ছিটকে যাওয়া করিম বেনজেমাকে আনা হচ্ছে খেলা দেখার জন্য। পল পগবাও আসছেন সঙ্গে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো সেদিন সেমিফাইনালে ফ্রান্স জেতার পর লকার রুমে গিয়ে এমবাপ্পেদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। কথা দিয়েছেন ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারলে এই লকার রুমেই তিনি সবার সঙ্গে নাচবেন। সুপার সানডেতে কে কী করবেন তা ঠিক করে নিচ্ছেন এখনই।
মজার ব্যাপার হয়েছে আর্জেন্টিনার ক্যাম্পে ছুটির দিনটিতে। সেদিন সব খেলোয়াড়ের স্ত্রী আর বান্ধবীরা মিলে একসঙ্গে ডিনার করেছেন। এবং তাঁরা ঠিক করেছেন আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতলে তাঁরা সবাই একই ট্যাটু করাবেন। মেসি-পত্নী রোকোজ্জু অবশ্য সেখানে ছিলেন না। তবে সে দেশের এক মিডিয়া কর্মীর কাছেই শোনা, মেসি-পত্নীই নাকি ঠিক করবেন ওই ট্যাটুতে কী লেখা বা আঁকা থাকবে। বেশ একটা আনন্দ আয়োজনের রেশ এখন আর্জেন্টিনাকে ঘিরে।