ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মতো উত্তর সিটি করপোরেশনও তাদের এলাকার বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বার্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে তৃতীয় পক্ষকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থাটির ১৭তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে দক্ষিণ সিটির মতো উত্তরেও বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে রাজস্ব আদায় শুরু হবে। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে মধ্যসত্বভোগীরা লাভবান হবেন। সিটি করপোরেশনকে শুধু রাজস্ব আদায় নয়, নাগরিকদের সেবার ক্ষেত্রেও প্রাধান্য দেওয়া উচিত। অন্যদিকে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা প্রতিদিন না নেওয়া এবং নির্ধারিত টাকার বেশি নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগও বাড়ছে।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে বাৎসরিক ভিত্তিতে প্রাইমারি কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারকে (পিসিএসপি) ময়লা সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছে। এজন্য দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এটি করা হয়। সর্বোচ্চ দরদাতাকে এটি দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে সিটি করপোরেশনেরও রাজস্ব যুক্ত হচ্ছে কোষাগারে। এবার উত্তর সিটি করপোরেশনের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, উন্মুক্ত টেন্ডার নয়, যারা এলাকাভিত্তিক এই সেবার সঙ্গে জড়িত, তাদের বার্ষিক চুক্তিতে ১০ লাখ টাকা জামানত ও ১০ লাখ টাকা বার্ষিক ফি দিয়ে এই লাইসেন্স নিতে হবে। আর এটির আবেদনের ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা, ব্যাংক সলভেন্সি (ব্যাংক সচ্ছলতা), গাড়ি ও নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক এলাকা থেকে অনেকগুলো আবেদন এলেও একটি সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে এর অনুমোদন দেওয়া হবে। আর প্রতি ওয়ার্ডে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা নেওয়ার ফি ১০০ টাকা এবং নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে ধরা হয়েছে ৫০ টাকা। এর আগে এসব ওয়ার্ডে একেক এলাকায় একেক প্রতিষ্ঠান তাদের মতো করে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করত। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেশি টাকা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে।
সিটি করপোরেশন বলছে, আইন অনুযায়ী বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করা তাদের কাজ নয়। তারা ময়লা ফেলার পাত্র বা এসটিএস থেকে ময়লা সংগ্রহ করবে। সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, করপোরেশন নগরীর বিভিন্ন স্থানে ময়লা ফেলার পাত্র বা অন্য কোনো আধারের ব্যবস্থা করবে। যেখানে অনুরূপ ময়লা ফেলার পাত্র বা আধারের ব্যবস্থা করা হবে, করপোরেশন সাধারণ নোটিশ দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর ও জায়গা-জমির দখলদারদের তাদের ময়লা বা আবর্জনা উক্ত পাত্র বা আধারে ফেলার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে। এই আইন অনুযায়ী করপোরেশন নির্ধারিত স্থান থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ভাগাড়ে নিয়ে যাবে। আর নাগরিকেরা তাদের বাসাবাড়ির বর্জ্য করপোরেশনের নির্ধারিত বিনে পৌঁছে দেবে। কিন্তু দেখা গেছে, বাসাবাড়ির বর্জ্য নাগরিকেরা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেয় না। এই সুযোগে বহু বছর ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ডভিত্তিক সংগঠন বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে করপোরেশনের নির্ধারিত বিনে পৌঁছে দিচ্ছে। এজন্য প্রতিটি বাসা বা হোল্ডিং থেকে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। তবে সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্সের (গৃহকর) সঙ্গে প্রায় ৩ শতাংশ ময়লা-আবর্জনার জন্য কর নিয়ে থাকে। নাগরিকেরা বলছেন, বেশির ভাগ এলাকার ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। কিছু এলাকায় সঠিক তদারকি না থাকায় মানুষের ওপর বাড়তি টাকার বোঝা চাপানো হচ্ছে। দক্ষিণ সিটিতে এখনো অনেক এলাকায় নির্ধারিত ৫০ থেকে ১০০ টাকার বেশিও নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আবার উত্তর সিটি করপোরেশনেও কোনো তদারকি না থাকায় যে যার মতো একেক এলাকায় একেক রকম টাকা নিচ্ছে। আবার নতুন ওয়ার্ডে দুই-তিন দিনেও ময়লা না নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশনের অন্যতম একটি কাজ। হোল্ডিং ট্যাক্সের সঙ্গে সিটি করপোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি কর নিয়ে থাকে। আবার আলাদা টাকাও দিতে হচ্ছে নাগরিকদের। সিটি করপোরেশন যদি জনবল বাড়িয়ে নিজেরা এই দায়িত্ব পালন করত, তাহলে জনগণের জন্য এই দিকটায় আরো সাশ্রয়ী হতো। আর সিটি করপোরেশনেরও রাজস্ব আদায় হতো। কিন্তু এখন মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে। শুধু সিটি করপোরেশনকে রাজস্ব আদায় নয়, নাগরিক সেবার মানের বিষয়েও আরো ভাবতে হবে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি শৃঙ্খলার মধ্য নিয়ে আসার জন্য প্রতিটি এলাকায় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে এলাকার কাউন্সিলরাও বিষয়টি তদারক করবেন।