কারওয়ান বাজারের মা সাফিয়া খাতুন ব্রয়লার হাউজের স্বত্বাধিকারী ইসমাইল খন্দকার বলেন, ‘গতকাল ২২০ টাকা কেজি বেচে আজ ২২০ টাকায় কিনেছি।
তাহলে কত টাকায় বিক্রি করব?’কিছুদিন ধরে বাড়তে থাকা ব্রয়লার মুরগির দামে রেকর্ড হয়েছে। ২৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে শুক্রবার এ মুরগির কেজি ২৩৫ টাকা ছাড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বাজারে এত বেশি দামে মুরগিটি বিক্রি হয়নি বলে জানান ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতাদের ভাষ্য, সরবরাহসহ অন্য কিছু সংকটে বেড়েই চলছে ব্রয়লারের দাম।
কারওয়ান বাজারের মা সাফিয়া খাতুন ব্রয়লার হাউজের স্বত্বাধিকারী ইসমাইল খন্দকার বলেন, ‘গতকাল ২২০ টাকা কেজি বেচে আজ ২২০ টাকায় কিনেছি।
তাহলে কত টাকায় বিক্রি করব?’ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমদানি কম। বাচ্চার দাম বেড়েছে। খাদ্য, তেল, গাড়ি ভাড়া সবকিছুর দামই বেশি।
অনেকেই মুরগি পালা ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি।’ মুরগি ও ডিমের দাম নিয়ে চরম অসন্তোষ ক্রেতাদের মধ্যে।
বেসরকারি চাকরিজীবী ফারুক-উজ-জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার সম্পর্কে বলার কোনো ভাষা নাই। প্রতিবাদ করার জায়গা আছে? জনগণের ভাষা নাই। যারা বিক্রি করবে তারা বাড়াবে।
আমাদের খেতে হবে, তাই কিনব, জনগণ কিনবে। ব্যস, আর কী বলার আছে?’ কারওয়ান বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয় ২৩৫ টাকায়। কোনো কোনো বাজারে তা ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
আগের সপ্তাহে তা ১৯০ থেকে ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। পাকিস্তানি হিসেবে পরিচিত সোনালি মুরগি কেজিতে বিক্রি হয় ৩২০ টাকা, ইতোপূর্বে যার কেজিপ্রতি দর ছিল ২৯০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে সেটি বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। ২০ থেকে টাকা বেড়ে লেয়ার মুরগির দাম উঠেছে ৩০০ টাকায়। এর আগে বিক্রি হয়েছিল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়।
মুরগি বিক্রেতা সোহাগ বলেন, ‘চাহিদা বেশি থাকলে দাম বাড়ে। বর্তমানে চাহিদা যত, সরবরাহ তার চেয়ে কম। তাহলে দাম বাড়বে না কেন বলেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘সব বাজারই প্রায় সিন্ডিকেটের দখলে।
ক্ষুদ্র খামারিরা যখন উৎপাদন করেন, তখন বড় ফার্মগুলো বাজার সাপ্লাই বাড়িয়ে দাম কমিয়ে দেয়। এতে লোকসানে পড়ে অনেক ছোট খামারি মুরগি পালা ছেড়ে দিয়েছেন।
এরপর ছোট খামারিদের মুরগি না থাকলে সরবরাহ কমিয়ে আবার দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা সবাই জানে, কিন্তু এর প্রতিকার কী? আর ব্যবস্থা নেবে কে? এখন খাদ্য, তেল, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
ফলে দামও বাড়ছে।’ ডিমের দামও চড়া এদিকে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ডিমের ডজন ঠেকেছে ১৪০ টাকায়। রোজা ঈদের পর তা ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিক্রেতারা।
বাজারভেদে ডিমের ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়, যা এক সপ্তাহে আগে আর ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। আর সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা ডজন।
কোনো কোনো বাজারে দুই ধরনের ডিমই একই দামে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মো. নাসির বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এই যে ১০০ ডিম কিনলাম ১ হাজার ৭০ টাকায়। ভাড়া ১০ টাকা লাগল।
বিক্রি করব ১ হাজার ৯০ টাকায়৷ মাত্র ১০ টাকা লাভ। ‘আমরা কী করব? বেশি দামে কিনে কাস্টমারও খুশি নন। আমরা বিক্রি করে বেশি যে লাভ করতে পারি, তা নয়।’ ডিমের দাম আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে বলে জানান এই বিক্রেতা।
তিনি বলেন, ‘ডিম চাহিদা মতো তো ডিলাররা দিচ্ছেনই না, উল্টো বলছেন আরও দাম বাড়বে; বলছেন ঈদের পর থেকে দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হইব।’