আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল আয়োজিত ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শীর্ষক’ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বাংলাদেশে যখন পদ্মা সেতু হচ্ছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, সমুদ্র জয় করছে, গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে, মহাসড়ক করছে, এলিভেটেডে এক্সপ্রেস করছে, মেট্রুরেল করছে, ট্যানেল করছে এটা আমরা মানতে পারছি না।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন করোনার মধ্যে ৪৩ বিলিয়ন রিজার্ভ হচ্ছে তখন আমরা মানতে পারছি না।’ এই না মানার নেপথ্যে আছে ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে সেই সেনাবাহিনীকে নিয়েও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেনাবাহিনীকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের অর্থ হচ্ছে আমাদের সার্বভৌমত্বকে নিয়ে ষড়যন্ত্র। কারণ তারা আমাদের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করে।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবে তার নাম মুছে ফেলা যায়নি; সম্ভব নয়। তার জন্মশতবার্ষিকী তাবত দুনিয়া পালন করছে। এই করোনা মহামারির মধ্যেও একের পর এক সরকার প্রধানরা বাংলাদেশে আসছেন। সেটা নিয়েও ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী যেন আসতে না পারেন সেজন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সুনামগঞ্জে আপনারা দেখেছেন কী নেক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং আর ঘটনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ব্যাপারে গণমাধ্যমকে স্বোচ্ছার হতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তীতে আছি। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা তো আলাদা কিছু নেই। ১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গবন্ধু তখনেই বাঙালি জাতির অধিকার ও স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই স্বাধীনতা আমাদেও প্রকৃত স্বাধীনতা নয় এবং সেই জায়গা থেকে চিন্তা ভাবনা করতে করতেই তদান্তিন কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড মনিকে ১৯৫৩ সালে বলেছিলেন আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করছি।’
সাংবাদিকদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু প্রেস কাউন্সিল গঠন করেছিলেন পেশাদার সাংবাদিকতা সৃষ্টি লক্ষ্যে। পেশাদার সাংবাদিকতা যদি না আসে তাহলে আমাদের এই সেক্টরটা দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু ৭৫’র পরবর্তীতে সাংবাদিকতার জায়গাটাকে কলঙ্কিত করা হয়েছে, কুলশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জানতেন বাংলাদেশের গণমাধ্যম যত শক্তিশালী হবে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যম প্রধানমন্ত্রী। এটা আমার বলার কিছু নাই। আপনারা ভালো জানেন। আমি বলি তিনি একজন এটাছ প্রধানমন্ত্রী। এমন কোনো জায়গা নাই যেখানে তার নজর নেই। এই যে শিশুদের নিয়ে আমরা এখানে প্রোগ্রাম করছি। এই শিশুদের নিয়ে তার ভাবনা কথা বার্তা, তার যে কর্মসূচি তা চিন্তাই করা যায় না। আজকের শিশুরা আগামী দিনের যে নেতৃত্ব দিবেন সেই শিশুরা কীভাবে বড় হবেন তা তিনি চিন্তা করছেন। শিশুদেরকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর যে ভাবনা তা মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। সেজন্য গণমাধ্যম একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পর এত ডায়নামিক লিডারশিপ আমরা পাই নাই। যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে পাই। শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছি না। তিনি যখন ১৯৮১ সালে সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমানকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশে আসলেন ৩২ নম্বরে তাকে যেতে দেওয়া হয় নাই। তার বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয় নাই। তখন তিনি বলেছিলেন, “আমি ক্ষমতার জন্য বাংলাদেশে আসি নাই। বাংলার মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি।” ৪০ বছরে তিনি প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশের একমাত্র নেতৃত্ব শেখ হাসিনা যিনি মানুষের জন্য কাজ করেন, দেশের জন্য কাজ করেন তার ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।’
‘আজকে সাংবাদিকদেরকে বিভিন্নভাবে বিদ্রুপ করা হচ্ছে। দলবাজ সাংবাদিকদের দলবাজ বলা হচ্ছে। আপনাদের যতই কুরুচিপূর্ণ বিশেষণ দেওয়া হোক না কোনো আপনারা বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলবেন, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলবেন এটা গর্বের।এখানে লজ্জা ও সংকুচতার কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধেও পক্ষে অবস্থানের জন্য এইসব কথা শুনতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সবার, তাকে খাটো করার সুযোগ নাই।’
শিশুদের প্রতি তার অনুভূতি ব্যক্ত করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে ছিলাম। তখন ভেবেছি যে, সবচেয়ে কষ্টে আছে শিশুরা। কারণ এই সময়টাতে স্কুল বন্ধ, বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই; চারদেয়ালের মধ্যে তারা বন্দী হয়ে আছে। ভেবেছি, এই বন্দী জীবনে থেকে ভবিষ্যত কীভাবে গড়ে উঠবে তা বলা মুশকিল। এটা মনোবিজ্ঞানীরা ভালো বলতে পারবেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সাব-এডিটররা শিশুদের জন্য যে আয়োজনটা হাতে নিয়েছে তা অত্যন্ত অর্থবহ। আমি যখন অনুষ্ঠান ঘুরে দেখলাম, শিশুদের সঙ্গে কথা বললাম। সবার মধ্যে একধরনের স্বতঃস্ফূর্ততা লক্ষ্য করলাম। আমি ধন্যবাদ জানাই এই ধরনের আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা করে। যদিও আমরা করোনার তৃতীয় ধাপে আছি তবুও শিশুদের জন্য এইরকম একটা আয়োজনের দরকার ছিল।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- সাংবাদিক নেতা দীপ আজাদ, আবদুল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুল মোমেন মিল্টন, অনুষ্ঠানের স্পন্সর কোম্পানি প্যান্টাগন ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিনয় শিল্পী অন্ত করিম। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মামুন ফরাজীর সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয়।
তৌফিক অপুর সঞ্চালনায় ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক ও বর্তমান নেতারা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান শেষে চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিধ মাহমুদ চৌধুরী।