মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া- প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ। এজেলায় রয়েছে রামসার টাঙ্গুয়া হাওর, টেকেরঘাট নীলাদ্রী লেক, বারেকটিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, হাওর বিলাস ও পাহাড় বিলাসসহ
আরো একাধিক নান্দনিক স্পট। এসব স্পটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দেশ ও বিদেশের শতশত পর্যটকরা প্রতিদিন ছুটে আসে। আর ভ্রমনের জন্য বেছে নেয় ছোট-বড় নানান ধরনের বাহারী ইঞ্জিনের নৌকা। পর্যটক
পরিবহণকারী এসব ইঞ্জিন চালিতো নান্দনিক নৌকা হাউসবোট হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এসব নৌকায় একের পর এক ঘটছে দূঘর্টনা। ফলে আগত পর্যটক ও জেলার সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়ছে আতঙ্ক কমছে পর্যটকের সংখ্যা। এজন্য
অনেকেই বলছে নানান অনিয়মের কারণে পর্যটকবাহী ওই সব হাউসবোটে লেগেছে শনির দশা। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টায় সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পৌরশহরের সাহেববাড়ি ঘাটে বাঁধা থাকা
অবস্থায় ‘জঙ্গা’ নামের একটি নান্দনিক হাউস বোটে হাঠৎ আগুন লাগে। পরে আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওই নৌকাটি তীর থেকে নদীর মাঝে ভাসিয়ে দেয় স্থানীয়রা। এঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে প্রায় ২ঘন্টা
চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। অগ্নিকান্ডের সময় নৌকার ভিতরে কোন পর্যটক না থাকার কারণে কেউ হতাহত হয়নি। তবে নৌকাটি বেশির ভাগ অংশই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই অগ্নিকান্ডের ঘটনার সময় নৌকার মালিক ঢাকায়
থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তবে আগুনে পুড়ে যাওয়া নান্দনিক নৌকাটি তৈরি করতে প্রায় ৪০-৫০লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানা গেছে। আর বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটে।
এরআগে গত শনিবার (৮ জুলাই) দুপুরে তাহিরপুর উপজেলার রতনশ্রী-সুরলারগাঁও গ্রামের মাঝে অবস্থিত বৌলাই নদীতে পর্যটকবাহী ইঞ্জিনের নৌকায় বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে কাঠ মেস্তুরী জানে আলম জেন্টু নৌকা থেকে ছিটকে নদীতে পড়ে
ডুবে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে সুনামগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল এসে প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর জানে আলম জেন্টুর লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এঘটনায় আহত হয় আরো ৩জন শ্রমিক।
এছাড়া গত জুন মাসে পর্যটকবাহী একটি হাউস বোটের টয়লেটের ভিতরে গোপন সিসি ক্যামেরা ধরা পড়ে ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ভ্রমনে আসা এক পর্যটকের কাছে। নারী পর্যটকদের নগ্ন ফটো ও ভিডিও ধারন করে ব্ল্যাকমেইল করা
উদ্দেশ্যে লাগানো এই সিসি ক্যামেরার বিষয়টি ওই পর্যটক দেখার পর, স্থানীয় সংবাদকর্মীদেরকে জানালে এনিয়ে জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনসহ বিভাগীয় পত্রিকায় মুখরোচক সংবাদ প্রকাশ হয়। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি
হয়। মূলত এঘটনার পর থেকে পর্যটক পরিবহণকারী হাউজ বোটে শনির দশা লেগেছে বলে অনেকের ধারণা। তাই একের পর এক ঘটছে দূর্ঘটনা।
এব্যাপারে নারায়নগঞ্জ থেকে আগত পর্যটক শামিম আহমেদ, রুমেল, হিমেল আশরাফ ও রাসেল আহমদসহ আরো অনেকে বলেন- আগের তুলনায় পর্যটক পরিবহণের নৌকাগুলোর মান উন্নত হয়েছে। কিন্তু নৌকার মালিকরা তাদের
ইচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সঠিক ভাবে সেবা দিচ্ছেনা। অনেকেই আবার হাউস বোটের টয়লেটে গোপনে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে ব্ল্যাক মেইল করার চেষ্টাসহ আরো নানান ভাবে পর্যটকদের হয়রানী করছে। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারী বৃদ্ধি করাসহ ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া জরুরী প্রয়োজন। তাহলে নৌকা মালিকদের বিভিন্ন অপকর্ম থেকে পর্যটকরা রক্ষা পাবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সুনামগঞ্জ স্টেশনের কর্মকর্তা নিউটন দাস জানান- ইদানিং পর্যটকের নৌকায় নানান দূর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে ন্যায় সংগত ভাবে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগী বা সেবা দেওয়ার দরকার আমরা তা দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে দূঘটনা থেকে বাঁচার জন্য পর্যটক পরিবহণকারী নৌকা বা হাউস বোটের মালিকদেরকে আরো সচেতন হবে।