কুড়িগ্রামের চিলমারীতে একটি সেতু ভেঙ্গে যাওয়ায় জন গুরুত্বপূর্ন রাস্তায় সেতুটি এখন পথচারীদের দুর্ভোগের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে চিলমারী উপজেলার পাত্রখাতা, সাব-বাধ, ব্যাপারীপাড়া, মাদারীপাড়া, কারেন্টবাজার ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ডাংগারচর গোমাট এবং হরিপুর অঞ্চলের হাজারো পথচারী।
ভূক্তভোগী এলাকাবাসী দুর্ভোগ লাঘবে সেতু চায় না, রাস্তা চায় তারা। জানা গেছে, উপজেলার রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা সাব-বাধ ব্যাপারী পাড়া এলাকায় সাইদালীর বাড়ীর পূর্বপাশ্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৪০ফুট লম্বা একটি সেতু নির্মাণ করা হয়।
যার নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। নির্মাণের কয়েক মাসের মাথায় বন্যার পানিতে সেতুটি অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও অদ্যাবধি তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা লক্ষ করা যায়নি। পথচারীদের সুবিধার্থে স্থানীয় উদ্যোগে এক সাইড ভেঙ্গে যাওয়া সেতুর পাশ্বে বাঁশের সাকো তৈরী করে দেয়া হয়েছে।
সেটিও বর্তমানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অতি কষ্টে রাস্তা পারাপার হচ্ছে দুই উপজেলার সেতু বন্ধনকারী ওই রাস্তাটির হাজারো পথচারী। শুকনা মৌসুমে ছোট-খাট যানবাহন সেতুর নিচ দিয়ে পারাপার হলেও কয়েকদিন পর তা আর সম্ভব নয়।
সরেজমিনে পাত্রখাত সাব-বাধ ব্যাপারীপাড়া এলাকায় এক সাইড ভেঙ্গে যাওয়া সেতুর নিচ দিয়ে মানুষ, বাইসাইকেল, মোটর সাইকেল, ঘোড়ারগাড়ীসহ ছোট-খাট বিভিন্ন যানবাহনকে পার হতে দেখা যায়। এ সময় এলাকাবাসী জানায়, সেতুটি নির্মানের কিছুদিন পর বন্যার পানিতে এক পাশ্ব দেবে গিয়ে রাস্তা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বন্যার পর সামান্য মাটি দিয়ে দায়সারা কাজ করেন কর্তৃপক্ষ। সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় এর কিছুদিন পর সেতুটির অপরদিক ভেঙে হেলে যায় এবং পানিতে পূর্ব পাশ্বের মাটি ধসে যায়। এতে এখানকার কয়েকটি বাড়ী-ঘরসহ আবাদী জমির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
পরবর্তীতে মানুষ চলাচলের জন্য এলাকাবাসী একদিকে মাটি ভরাট করে ও অপরদিকে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেয়। তখন থেকেই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে মানুষ। আর যানবাহন চলাচল করে সেতুর নিচ দিয়ে। বর্তমানে এলাকাবাসীর দাবী সেতুটি ভেঙ্গে ফেলে আগের মত রাস্তা নির্মান করা হোক।
ওই এলাকার অনেকে বলেন, এ জায়গায় কোন সেতু ছিল না,সেতুর প্রয়োজনও ছিল না। হঠাৎ করে সেতু নির্মাণ করায় পানির চাপ পড়ে এবং আশপাশের বাড়ী-ঘরসহ আবাদী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এসময় সাদ্দাম মিয়া ও সাহিদা বেগম বলেন, গত ২টি বর্ষা মৌসুমে সেতুর উজানে ব্যাক্তিগত প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচে বান্ডাল তৈরী করে সেতুর নিচ দিয়ে পানি যাওয়া বন্ধ রাখায় আমাদের
বাড়ী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু পানির তোরে সেতুটির দুই পাশ্বে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় শুকনা মৌসুমেও পানি শুকিয়ে যায় না। নিজস্ব উদ্যোগে উজানে বান্ডাল দেয়া না হলে সেতু সংলগ্ন বাড়ী-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হত। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন করে সেতু নির্মাণ কিংবা সেতুর স্থানে রাস্তা তৈরী করা না হলে বর্তমানে চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজন হরিপুর ঘাট হয়ে
সুন্দরগঞ্জ যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। এবং বর্ষার পানিতে বাড়িঘর ভেসে যাওয়াসহ ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এবিষয়ে রমনা ইউপি চেয়ারম্যান আজগার আলী সরকার বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে মানুষ চলাচলের জন্য সাময়িক ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং আগামী শুকনা মৌসুমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বর্তমানে পথচারীদের মরণ ফাঁদ ওই সেতুটি প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ কোহিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, বর্তমানে জেনেছি। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।