গাজীপুরের টঙ্গীতে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, মাদক শেল্টার দাতা, জুয়ার আসর ও কিশোর গ্যাং পরিচালনার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত সজল সরকার টঙ্গীর ৪৮নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। দীর্ঘদিন যাবত
টঙ্গীর বনমালা, হাজী মার্কেট, রসুলবাগ আচারপট্টিসহ দত্তপাড়া এলাকায় সজলের নেতৃত্বে অন্তত ৩০-৪০জনের একটি বাহিনী এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এই বাহিনীর ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। নির্যাতনের স্বীকার হলেও ভয়ে মুখ খুলছেনা ভুক্তভোগীরা। মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়ে
জেলও খেটেছেন সজল সরকার। সম্প্রতি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ‘সজল বাহীনির’ দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ। এলাকায় পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ করে সজল। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সজল সরকারের নেতৃত্বে ৪৮নং ওয়ার্ডে রয়েছে
৩০-৪০জনের একটি বাহীনি। এই বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যই কিশোর। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই বাহিনীর সদস্যরা নানান অপকর্ম করে বেড়ায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সফিউদ্দিন সরকার স্কুল রোডের সামনে থেকে বনমালা রেললাইন ও হায়দ্রাবাদ পর্যন্ত
চলাচলরত ইজিবাইক থেকে চাঁদা তোলা হয় সজল সরকারের নেতৃত্বে। প্রতিদিন অন্তত ৫০-৬০টি ইজিবাইক থেকে ৬০-৮০টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এই টাকা তোলেন সজলের সহযোগী লাইনম্যান জাকির। এই লাইনে ইজিবাইক চালাতে হলে অগ্রিম পাঁচ হাজার টাকা করে দিতে হয়
সজলকে। ইজিবাইক স্ট্যান্ডে অন্যান্য অটোরিকশা চালকরা যাত্রী তুললে তাদেরকে তুলে নিয়ে মারধর করেন সজল ও তার বাহিনীর সদস্যরা। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এক অটোরিকশা চালককে মারধর করে সজল ও তার বাহীনির সদস্যরা। এছাড়াও হাজী মার্কেট থেকে হাউজবিল্ডিং পর্যন্ত সড়কের
জায়গা দখল করে ভ্যানগাড়ি বসিয়ে চাঁদা তোলে ‘সজল বাহিনী’। প্রায় শতাধিক ভ্যানগাড়ি থেকে প্রতিদিন ৫০টাকা করে তোলা হয়। সড়কে ভ্যানগাড়ি বসানোর কারণে ব্যস্ততম বনমালা সড়কে প্রতিদিনই যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। এই বাহীনির অন্য সদস্যরা হলেন,
বনমালা এলাকার আলী ওরফে ছোট আলী (২৪), বাটলা শাওন (২০), সাদ্দাম (২৬). সাব্বির ওরফে কেবিডি (২০), শৈশব (২৪), তুষার (২২), রহমত (২৩), মহসিন (২৭), রহিম মোল্লা (৩৫), লাইনম্যান জাকির (৩২)। এদের মধ্যে আলী ও শৈশব বনমালা রেল লাইন এলাকার মাদক ও জুয়ার আসর
নিয়ন্ত্রণ করে। বনমালা এলাকায় চলতি ট্রেন থেকে মোবাইল ছিনতাই চক্রের সদস্য আলী। ছিনতাই, চাঁদাবাজির টাকা নিয়ে প্রতিদিনই জুয়ার চালায় আলী ও শৈশব। এমন বেশ কয়েকটি জুয়ার আসরের ভিডিও ফুটেজ পত্রিকার এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। বাটলা শাওন ও সাব্বির ওরফে
কেবিডি নিয়ন্ত্রণ করে হাজী মার্কেট ও রসুলবাগ আচারপট্টি এলাকা। বাটলা শাওন মাদক কারবারের অভিযোগে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়। এছাড়াও সজলের নেতৃত্বে এই বাহীনীর সদস্যরা এলাকার বিভিন্ন অলি-গলিতে ইয়াবা ও বিয়ার ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। এই বাহীনির প্রত্যেকের নামেই
থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। ‘সজল বাহীনির’ অপকর্ম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই এই বাহীনীর কিশোর গ্যাং সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সম্প্রতি সুইস গিয়ার নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালানোর অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় সাব্বির ওরফে কেবিডি।
এছাড়াও ডাকাতির প্রস্তুতির সময় গ্রেপ্তার হয় হৃদয় ও দিপু। এছাড়াও দত্তপাড়া-বনমালা এলাকায় কেউ জমি কিনে বাড়িঘর নির্মান করতে গেলে মিষ্টি খাওয়ার অজুহাতে চাঁদা দাবি করেন সজল সরকার। চাঁদা না দিলেই নির্মান শ্রমিকদের মারধর করেন এই বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিদিন বিভিন্ন
জায়গা থেকে চাঁদা তুলে সজল তার সহযোগীদের নিয়ে বনমালা রহিম মোল্লার বাসায় বসে ভাগ বাটোয়ারা করেন। এবিষয়ে সজল সরকারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি রাজনিতি করি । আমার অনেক কর্মি আছে। আমি কোন গ্যাং
কালচারের সাথে জড়িত না। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে ওই এলাকায় জুয়া চালায় আনসার মোল্লার ছেলে রনি মোল্লা। আর আমার বিরুদ্ধে একটি মাদকের মামলা আছে, তবে সেটা মিথ্যা মামলা।