মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার সুনামগঞ্জ সদর, বিশ^ম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ,
মধ্যনগর, ধর্মপাশা, শাল্লা, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিন্মা ল। ফলে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে লাখলাখ মানুষ।
আজ মঙ্গলবার (১৭ মে) দুপুরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে- জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ পৌরশহরের আরপিননগর, সাহেববাড়ি, বড়পাড়া, পুরানপাড়া, তেঘরিয়া, মল্লিকপুর, ইব্রাহিমপুর, উকিলপাড়া, নবীনগর,
জলিলপুর এলাকায় দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার নিচু সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।
এদিকে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ আ লিক সড়ক প্লাবিত হওয়ার কারণে বিভাগীয় শহর সিলেটের সাথে
সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়েগেছে। ছাতক উপজেলায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারণে ৩টি স্কুলের আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৭০টি পরিবার। পানিতে ডুবে গেছে ছাতক পৌরশহরসহ
এউপজেলার ৮টি ইউনিয়ন। তার মধ্যে ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ। এসব এলাকায় নৌকা দিয়ে মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করছে।
জেলার সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার সাথে ৭টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়েগেছে। হাওর বেষ্টিত এউপজেলার চারদিকে এখন অথৈ পানি থৈথৈ করছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে
শাল্লা ও মধ্যনগর উপজেলায়। এই তিন উপজেলার লাখলাখ মানুষ এখন পানি বন্দি। অনেক মানুষের বসতবাড়ি বানের পানিতে ভেসে গেছে। অনেকের কষ্টের ধান যাতে ভেসে না যায় সেজন্য
রাস্তায় রেখেছেন। এসব উপজেলার নিন্মা লের অসহায় মানুষ তাদের গবাদিপশু নিয়ে পড়েছেন মহাবিপদে। এছাড়া দোয়ারাবাজার, বিশ^ম্ভরপুর, ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জসহ জেলার অন্যান্য উপজেলায় ও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে- পাহাড়ি ঢলের পানি এসে অনেক বাড়িঘর ডুবে গেছে। এর ফলে রান্না করতে পারছেনা অনেকেই। তাই ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে আছে তারা।
এছাড়া ঢলে পানিতে গোখাদ্য পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। একারণ গবাদিপশুর খাদ্য সংকট ও দেখা দিয়েছে। পানি অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে মহা বিপদে পড়েছে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরবাসী।
এব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ ও ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান- দুই উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে
নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্যা মোকাবেলা করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন- জেলার সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার ও অন্যান্য নদ-নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘন্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নেমেছে। এর ফলে সুনামগঞ্জের নিন্মা লে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন- বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও জেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর যেসব উপজেলায় শুকনো খাবারের প্রয়োজন সেই সব উপজেলায় শুকনো খাবার পাঠানোর উদ্যোগ ও নেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমরা সর্তক রয়েছি।