সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্তে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীদের চলছে মহাতান্ডব। তারা প্রতিদিন কোটিকোটি টাকার মালামাল পাচাঁর করার পর বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে
করছে লাখলাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন। ফলে একদিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার, অন্যদিকে সীমান্তে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল। আর এই সীমান্ত দূর্নীতির মহাতান্ডব বন্ধ করার জন্য চোরাচালানের সাথে জড়িত
প্রশাসনের দূনীর্তিবাজ কর্মকর্তা- কর্মচারী ও গডফাদারসহ তাদের সোর্স ও চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করা জরুরী প্রয়োজন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল বুধবার (৮ই জানুয়ারী) সন্ধ্যার
পরপর চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য খ্যাত বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ডলুরা, চিনাকান্দি ও মাছিমপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর শুরু করে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী ও সোর্স পরিচয়ধারীরা। ওই সময়
মাছিমপুর সীমান্তের গামাইতলা এলাকা দিয়ে দেশীয় সুপারী বস্তা ভর্তি করে চোরাকারবারী সাইদুল ইসলাম (২৩) ও তার সহযোগীরা ভারতের ভিতরে যায়। আর এই খবর পেয়ে ভারতের ১৯৩ ব্যাটালিয়নের করাইগড়া ক্যাম্পের
বিএসএফ সদস্যরা তাড়া করে। তখন চোরাকারবারীরা তাদের মালামাল ফেলে দৌড়ে দেশের অভ্যন্তরে আসার সময়বিএসএফ গুলি চালায়। সেই গুলিতে চোরাকারবারী সাইদুল আহত হলে তার সাথে থাকা সহযোগীতা
ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু চোরাকারবারী সাইদুলের অবস্থা আশংকাজনক দেখে রাতেই তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে
কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষনা করেন। মৃত চোরাকারবারী ওই উপজেলার গামাইতলা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে। আরো জানা গেছে- এরআগে ভোর রাত সাড়ে ৪টায় মাছিমপুর বিজিবি ক্যাম্পের সামনে
দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁর ফুছকার চালান ১৪টা অটোরিক্সায় বোঝাই করে পাশের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্ত পথে জাদুকাটা নদীসংলগ্ন ঢালারপাড় গ্রামের নিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি অভিযান চালিয়ে ১৪
লাখ ৬২হাজার টাকা মূল্যের ৭ হাজার ৩১০ কেজি ফুছকা জব্দ করে অটোরিক্সা গুলো ছেড়ে দেয়। এছাড়া প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাউড়গড় সীমান্তের সাহিদাবাদ পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩-৪গজ ভিতর
থেকে ৪-৫শ লোক দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী চোরাকারবারীরা ১৫-২০লাখ টাকা কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু করে এবং সেই পাচাঁরকৃত পাথর ৪০-৫০টা ঠেলাগাড়ি দিয়ে ও পাচাঁরকৃত কয়লা ১৫-২০টা মোটর সাইকেল দিয়ে
ওপেন বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে পরিবহণ করে লাউড়গড় বাজারের চারপাশে মজুত করে বিক্রি করলেও কোন পদক্ষেপ নেয়না বিজিবি। এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত জাদুকাটা নদী দিয়ে
ভারত থেকে শতশত বারকি নৌকা বোঝাই করে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা পাচাঁর করছে কোটি টাকার কয়লা ও পাথরসহ মদ,গাঁজা,ইয়াবা,কম্বল,নাসির উদ্দিন বিড়ি, চিনি ও ফুছকা। অন্যদিকে পাশের চাঁনপুর
সীমান্তের আনন্দপুর, কড়ইগড়া ও রাজাই এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই সোর্স ও চোরাকারবারীদের মহাতান্ডব শুরু হয়। এই সীমান্তকে সোর্স ও চোরাকারবারীরা মদ, ফুছকা, চিনি, জিরা, কম্বল, নাসিউদ্দিন বিড়ি, ঘোড়া পাচাঁরের
নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহার করছে। কারণ প্রতিদিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচাঁর হচ্ছে কোটি টাকার মালামাল।
অন্যদিকে প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (৯ই জানুয়ারী) ভোর রাত সাড়ে ৪টার পর থেকে চারাগাঁও
সীমান্তের এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা, লালঘাট, জংগলবাড়ি ও কলাগাঁও মাইজহাটি এলাকা দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁরকৃত প্রায় ৫শ মেঃ টন কয়লা ট্রলি বোঝাই করে ও ২শ লোক দিয়ে বিজিবি ক্যাম্পের চারপাশে অবস্থিত
১০- ১৫টি ডিপুতে মজুত করেছে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা। এব্যাপারে চারাগাঁও শুল্কস্টেশনের একাধিক বৈধ ব্যবসায়ীরা বলেন-বিজিবির সামনে দিয়ে প্রতিরাতে তাদের সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা
নিয়ে দল বেঁধে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচারকৃত শতশত মেঃটন অবৈধ কয়লা ক্যাম্পের চারপাশে অবস্থিত বিভিন্ন ডিপুতে মজুত করে। কিন্তু বিজিবি এব্যাপারে জোড়ালোকোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে বৈধ ব্যবসায়ীরা
বিরাট ক্ষতি শিকার হচ্ছে। একই ভাবে টেকেরঘাট সীমান্তের হাইস্কুল ও পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিয়েসহ নীলাদ্রী
লেকপাড়, বুরুঙ্গা ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পাচাঁর হচ্ছে কয়লা ও চুনাপাথর।
বিজিবি মাঝে মধ্যে কিছু মালামাল আটক করে কিন্তু চোরাচালান বন্ধ না হয়ে বরং আরো বেড়ে যায়। একই ভাবে কয়লা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর হচ্ছে বালিয়াঘাট সীমান্তে দিয়ে। সীমান্ত চোরাচালানের মাধ্যমে মাদক, অস্ত্র,
কয়লা ও পাথর পাচাঁর করতে গিয়ে পাহাড়ি গুহায় মাটি চাপা পড়ে, বিএসএফের তাড়া খেয়ে ও গুলি খেয়ে তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তে এপর্যন্ত ১২জন, বালিয়াঘাট সীমান্তে ৩৫জন, টেকেরঘাট সীমান্তে
১৭জন, চাঁনপুর সীমান্তে ৯জন ও লাউড়গড় সীমান্তে অর্ধশতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে এব্যাপারে বিশ^ম্ভরপুর থানার ওসি মোখলেছুর রহমান জানান- নিহত সাইদুল নোম্যান্স ল্যান্ডে ছিল, বিএসএফ
তাকে লক্ষ্য করে গুলি করার পর সে গুলিবিদ্ধ হয়ে গামাইতলা স্কুলের সামনে আসে। পরে লোকজন উদ্ধার করে। সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক একেএম জাকারিয়া কাদির সাংবাদিকদের জানান-জেলার
সীমান্ত এলাকায় টহল তৎপরতা জোরদারসহ গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। পাশপাশি বাংলাদেশী যুবক গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয় নিয়ে বিএসএফের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত
এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।