আলোচ্য আয়াতে ধৈর্য ও আল্লাহমুখী হওয়ার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তার আলোকে বিশেষজ্ঞ আলেমরা ১০টি কাজের কথা বলেন। যার মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি বিপদ থেকে মুক্তি ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে পারে।
১. আল্লাহমুখী হওয়া : কোনো বিপদ বা সংকটে পড়লে মুমিনের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো আল্লাহমুখী হওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘আমার শাস্তি যখন তাদের ওপর আপতিত হলো তখন তারা কেন বিনীত হলো না? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের চোখে শোভন করেছিল।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৪৩)
২. আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা : বিপদ থেকে মুক্তির ব্যাপারে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা এবং বিপদে পড়ার কারণে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ না করা; বরং আল্লাহর কাছে মুক্তি ও কল্যাণ কামনা করা। হাদিসে কুদসিতে (রাসুলের জবানে আল্লাহর ভাষ্য) এসেছে, ‘আমি বান্দার সঙ্গে আমার প্রতি তার ধারণার অনুরূপ আচরণ করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৫০৫)
৩. অবিরাম দোয়া করা : অবিরাম দোয়া ও প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ মুমিনের বিপদ ও সংকট দূর করে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘বরং তিনিই আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ দূর করেন।…’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৬২)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করে, আমি তো তাদের কাছেই। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই। সুতরাং তারাও আমার আহ্বানে সাড়া দিক এবং আমাতে ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৬)
৪. বেশি বেশি ইস্তিগফার করা : ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা বিপদ ও দুশ্চিন্তা দূর করে এবং জীবনে প্রাচুর্য আনে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি তো ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে জীবিকা দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫১৮)
৫. বেশি বেশি জিকির করা : সংকটকালে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির বা স্মরণ করা আবশ্যক। কেননা এতে মানসিক অস্থিরতা কমে। তাসবিহ পাঠ, মাসনুন দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো! আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)
৬. পারস্পরিক সহযোগিতা : বিপদ, বিপর্যয় ও সংকটের সময় মুমিনরা পরস্পরের সহযোগিতা করবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা সৎ কাজ ও আল্লাহভীতিতে পরস্পরের সহযোগিতা করবে এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অপরের সহযোগিতা করবে না।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো মুমিনের কোনো অসুবিধা দূর করে দেয়, আল্লাহ তার পরকালের অসুবিধা দূর করে দেবেন। যে কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখেন। যে পর্যন্ত বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে সে পর্যন্ত আল্লাহ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৪২৫)
৭. আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা : মুমিন সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনি তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)মহানবী (সা.) বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথাযথভাবে ভরসা করতে পারো, তবে তিনি তোমাদের পাখির মতো জীবিকা দান করবেন—সে সকালে খালি পেটে বের হয় এবং বিকেলে ভরা পেটে ঘরে ফেরে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)
৮. ধৈর্য ধারণ করা : যেকোনো বিপদ ও সংকটে মুমিন ধৈর্যহারা হবে না; বরং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা মোকাবেলা করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের বিষয়টি কত চমৎকার। তার জন্য শুধুই কল্যাণ—কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নেই। যদি তার জন্য কোনো খুশির ব্যাপার হয় এবং সে কৃতজ্ঞতা আদায় করে তবে সেটা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি কোনো দুঃখের বিষয় হয় এবং সে ধৈর্য ধারণ করে, সেটাও তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)
৯. নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া : বিপদ ও সংকটে আল্লাহ মুমিনদের নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। এটা বিনীত ছাড়া অন্যদের জন্য অবশ্যই কঠিন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৫)
১০. আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান আশা করা : বিপদাপদের কারণে মুমিনের যে পার্থিব ক্ষতি ও কষ্ট হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। সুতরাং মুমিন সংকটকালে ধৈর্য ধারণ করবে এবং আল্লাহর কাছে এর উত্তম প্রতিদান আশা করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে—এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে এসবের বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৪১)