শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২৭৪ নাম্বার পেয়ে ১৩০৭ মেধাক্রম নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েও ভর্তির নিশ্চয়তা নেই পঞ্চমী রানীর।
অত্যন্ত মেধাবী পঞ্চমী রানী বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের বামুনিয়া গ্রামের শ্রী শ্যামল চন্দ্র সরকারের একমাত্র কন্যা।
ছোট একটি ঘর। নেই বিলাসিতার কোন ছোঁয়া। আশে পাশের বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও বিদ্যুতের আলো নেই পঞ্চমী রানীর বাড়িতে। তবুও থেমে থাকেনি পঞ্চমী রানী। হ্যারিকেনের আলোয় লেখাপড়া করেছেন তিনি।
ছোট বেলা থেকেই পঞ্চমী রানীর স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার, সাদা অ্যাপ্রোন গায়ে জড়ানোর। অবশেষে পঞ্চমী রানীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চট্টগ্রামে চান্স পেয়ে।
মেধাবী এই শিক্ষার্থী এলাকার মমতাজুর রহমান কিন্ডার গার্টেন স্কুল থেকে গোল্ডেন-এ প্লাস ও বৃত্তি পেয়ে পিএসসিতে সফলতার সহিত উত্তীর্ণ হয়। এরপর রাইয়্যান মডেল একাডেমি থেকে জেএসসি ও এসএসসি উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন-এ প্লাস ও বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
সব প্রতিযোগিতা, অনুষ্ঠান, গার্লস গাইড সবকিছুতেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। স্কুলের সবাই একনামে চিনে তাকে। ছোটবেলা স্যার-ম্যামদের প্রিয় ছিল পঞ্চমী রানী।
সে স্কুল ও কলেজ জীবনে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, লয়ার, প্রোগ্রামার, ম্যাথমেটিশিয়ান আরও কত কিছুই হওয়ার স্বপ্ন দেখত। তবে সাদা অ্যাপ্রোনের মায়া উপেক্ষা করতে পারেনি পঞ্চমী রানী।
চোখের জ্বল ফেলতে ফেলতে পঞ্চমী রানি বলেন, আমি মেডিকেলে চান্স পেয়ে যতটা আনন্দিত তার চেয়েও বেশি কষ্ট পাচ্ছি আমাকে ভর্তি করানো নিয়ে বাবার দুশ্চিন্তায়। বাবা প্রতি রাতে আমার জন্য ঈশ্বরের কাছে খুব কান্না কাটি করে। আত্মসম্মানের কারণে বাবা কারো কাছে আর্থিক সাহায্যের হাত বারায়নি। কিন্তু আজ আমি বলার কোন ভাষা খুজে পাচ্ছি না। শুধু বলি আমি ভর্তি হয়ে বাবার চোখের জ্বল মুছে দিতে চাই।
এব্যাপারে পঞ্চমী রানীর বাবা শ্যামল চন্দ্র বলেন, আমার মেয়েকে ছোট বেলা থেকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছি, লেখাপড়া করিয়েছি, কিন্তু আজ মেয়েকে মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পরেও ভর্তি করাতে পারছি না। আমি বাবা হয়ে আজ অর্থের কারণে হার মেনে গেলাম নিজেকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মনে হচ্ছে, হায়রে অর্থ । সারারাত দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারিনা। এক শতক জায়গাও নেই যা বিক্রি করে মেয়েকে ভর্তি করাবো। জানিনা মেয়ের স্বপ্নকে কিভাবে বাস্তবে রুপ দেব।