মোজাম্মল আলম ভূঁইয়া-সুনামগঞ্জে গত কয়েক দিন যাবত রাতে বৃষ্টি হয় আর দিনে কমে পানি। প্রকৃতির এই বিচিত্র খেলায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার লাখলাখ মানুষ। বাংলা সনের চলতি আষাঢ মাসের প্রথম দিকে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ডুবে যায় জেলার হাওরগুলো।
অন্যান্য বছর বৈশাখের শুরুতে পানি চলে আসলেও এবার এসেছে একটু দেড়ীতে। তবে পানি আসার পর থেকে সপ্তাহখানেক পরপর প্রকৃতি তার রুপ পরিবর্তন করে। কিন্তু উজান থেকে পাহাড়ি ঢল কম আসার কারণে জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, চলতি, চেলা, খাসিয়ামারা, যাদুকাটা, কালনী, রক্তি ও পাটলাইসহ আরো একাধিক নদীর পানি কিছুটা কমছে।
বেড়েছে হাওরের পানি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে- আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৯টায় সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ৬সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে এই নদীর ছাতক দিয়ে বিপৎসীমার ১০২সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানির পরিমান বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার। একই ভাবে বেড়েছে তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই নদীর সোলেমারপুর এলাকার পানি। এদিকে দোয়ারাবাজার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ডুবে গেছে অনেক বসতবাড়ি। গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে ১০০মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
আর ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২৫৬ মিলিমিটার। ওই খানে বৃষ্টিপাত বেশি হলেই উজান থেকে নেমে আসে ঢল। সেই ঢলের পানির কারণে বৃদ্ধি পায় সুনামগঞ্জে নদ-নদী ও হাওরের পানি। তবে এবছরের চলতি জুলাই মাসে সুনামগঞ্জে সর্বোচ্ছ বৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- উজান থেকে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ পৌরশহরের আরফিননগর এলাকার পাকা সড়ক, মঙ্গলকাটা বাজার, তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা ১০০মিটার, দূর্গাপুর ও আনোয়ারপুর সড়ক প্লাবিত হয়।
কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) পাহাড়ি ঢলের পানি কম আসায় এসব সড়কের পানি কিছুটা কমেছে। তবে দোয়ারাবাজার উপজেলার জিরাগাঁও নদীর পূর্ব পাড়ের অর্ধশতাধিক বসতবাড়িতে পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে আসবাবপত্র নষ্ট হওয়াসহ ভেঙ্গে পড়েছে অনেক বাড়িঘর। হুমকিতে রয়েছে এউপজেলার খাসিয়ামারা নদীর দুই পাড়ের বেড়িবাঁধ ও
সুরমা ইউনিয়নের মহব্বতপুর রাবারড্যাম সড়ক। পানিতে তলিয়ে গেছে টিলাগাও এলাকার সড়ক। চিলাই নদীর বেরীবাঁধ ভেঙ্গে বাংলাবাজার-বগুলাবাজার সড়কের কালভার্টের পাটাতনের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। ফলে যে কোন সময় ঘটতে পারে দূঘটনা।
আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের পোছনা এলাকা হতে পাতারগাঁও হয়ে চকবাজার পর্যন্ত সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসড়কের জামালগড় ব্রীজ সংলগ্ন রাস্তার প্রায় ৭০মিটার ও সূর্যেরগাঁও এলাকার পানি কিছুটা কমার কারণে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জ-বিশ^ম্ভরপুর সড়কের দূর্গাপুর ৫০মিটার ও শক্তিয়ারখলা ১০০মিটার পাকা সড়ক এখনও পানিতে ডুবে আছে। এজন্য এসব স্থানে ইি ন চালিতো নৌকা দিয়ে মানুষ ও মোটর সাইকেল পারাপার করছে। অনেকে আবার ঝুকি নিয়ে প্লাবিত সড়কের পানি দিয়েই হচ্ছে রাস্তা পারাপার।
তবে এসকল সড়কে বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার ভারী যানবাহন চলাচল। এব্যাপারে তাহিরপুরের যাত্রীবাহী মোটর সাইকেল চালক আব্দুল হান্নান, নবী হোসেন, সিএনজি চালক মাসুক মিয়া, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের
সাবেক চেয়ারম্যান এরশাদ আলী, বর্তমান ইউপি সদস্য কামাল হোসেনসহ আরো অনেকে বলেন- তাহিরপুর-বিশ^ম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি থাকার কারণে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। এতে জেলা শহরের সাথে যাতায়াত করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ মোর্শেদ মিশু জানান- পাহাড়ি ঢলের পানিতে আমার উপজেলার বসতবাড়ির ক্ষতি হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন- গত ৪৮ ঘন্টা ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। সুরমা নদীসহ জেলার সকল নদ-নদী ও হাওরের পানি বিপদসীমার নিচে নামতে শুরু করেছে। তাই বড় বন্যা হওয়ার কোন আশঙ্কা নাই। তবে সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হলে পানির পরিমান আবারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।