বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
spot_img
Homeপাঠকের কলামদোকানের শাটার নামিয়ে পাহারা বসিয়ে বিক্রি!

দোকানের শাটার নামিয়ে পাহারা বসিয়ে বিক্রি!

চলমান লকডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট নির্ধারিত সময় পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এর বাইরে দোকান ও শপিংমল পুরোপুরি বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু পুরান ঢাকার সদরঘাট ও বাংলাবাজারের নর্থব্রুক হল রোড়ের চিত্রটা ভিন্ন। লকডাউনের মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এখানকার গার্মেন্টস পণ্য ও গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানে বিক্রি চলছে।

অবশ্য খালি চোখে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এখানে মালামাল বিক্রি চলছে। কারণ সব দোকানের শাটার থাকছে বন্ধ। তবে দোকানি ও কর্মচারীরা সবাই সামনে ঘোরাফেরা করেন। ফাঁকে কোনো গ্রাহক এলে দ্রুত শার্টার তুলে প্রয়োজনীয় মালামাল দিয়ে আবার বন্ধ করে দেন।

সরকারের নির্দেশনা অমান্য করায় যাতে জরিমানা বা পুলিশের জেরার মুখে পড়তে না হয় সেজন্য মার্কেটেরই লোকজন সতর্ক পাহারায় থাকেন মূল সড়কে।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার নেয়ায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রথমে ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। পরে তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’শুরু হয়, যা বুধবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার তা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হলো।

লকডাউনে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ রয়েছে। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ-সংক্রান্ত অফিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে। গণমাধ্যমসহ জরুরি সেবা কার্যক্রমও চলবে। প্রথমে ব্যাংক বন্ধের ঘোষণা দিলেও পরে তা আবার খোলার সিদ্ধান্ত হয়। আর শিল্পকারখানাগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রয়েছে।

খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোরর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (সরাসরি/অনলাইন) করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে।

মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, সরকারের এই নিয়মকে পাশ কাটিয়ে কৌশলে দোকান খোলা রেখে কেনাবেচা করছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা।

দুপুরের দিকে দেখা গেছে, ভিক্টোরিয়া পার্ক মসজিদের সামনে গলির মুখে আড়াআড়ি বাঁশ দিয়ে আটকে দেয়া আছে। কিন্তু এরপর থেকে বাংলাবাজারের দিকে যাওয়ার রাস্তার পাশের গাড়ির যন্ত্রাংশের সামনে মানুষের জটলা। ফাঁকে ফাঁকে কাউকে মার্কেটের ভেতরে ঢুকে আবার টায়ারসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ নিয়ে বের হতে দেখা যায়। ক্রেতাদের রাস্তায় বসেই লেনদেন শেষ করে চলে যেতে দেখা গেছে।

তবে গলির মধ্যে অচেনা মানুষ দেখলে অনেককেই আড় চোখে তাকাতে দেখা যায়।

একদিকে যখন অল্পস্বল্প মালামাল বিক্রি চলছে তখন অন্যদের কড়া নজর রাখতে দেখা গেছে টহল পুলিশের দিকে। কারণ পুলিশ এলে জরিমানার মুখে পড়তে হবে, এই শঙ্কা আছে সবার মধ্যে।

সদরঘাটেও দেখা গেছে একই চিত্র। গ্রেটওয়াল মার্কেটের উল্টো পাশের মার্কেটের গলির মুখে লোহার গেট বন্ধ। কিন্তু ভেতরে এবং সামনে লোকজনের কোলাহল। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এখানেও নর্থব্রক রোডের মতো অবস্থা। ক্রেতারা আসার সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে বাচ্চাদের পোশাকসহ গার্মেন্টেসের পণ্য দ্রুত বের করে দিতে দেখা গেছে এখানে। বিষয়টা অনেকটা চোর-পুলিশ খেলার মতো।

অবশ্য এখানেও এক গ্রুপকে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসছেন কি না সেদিকে নজর রাখতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দোকানি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে তো হবে। সংসার আছে, দোকানের কর্মচারীর বেতন, দোকান ভাড়া এসব কীভাবে পরিশোধ করবো? এইজন্যই নির্দিষ্ট কিছু কাস্টমার আছে তারা এলে কিছু মালামাল বিক্রি করতেছি।’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমন লুকোচুরি করে বিক্রি করলেও মাঝে মধ্যে জরিমানার মুখে পড়তে হচ্ছে কাউকে কাউকে।

spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ