কুড়িগ্রামে ৭ বছরের এক শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে মারপীট করার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দুই মিনিটি ত্রিশ সেকেন্ডের মারপীটের ভিডিওটি সবার হাতে হাতে পৌঁছানোর পর টনক নড়েছে প্রশাসনে। লকডাউনে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে মাদ্রাসা চালু করে লেখাপড়া এবং নির্মম নির্যাতনের ঘটনাটি তদন্তে মাঠে নেমেছে জেলা পুলিশ বিভাগ।
বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে মাদ্রাসা কর্তপক্ষ শিক্ষার্থীটির অভিভাবকসহ সালিশ বৈঠকে বসে। বৈঠকে ওই শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে জানায় মাদ্রাসা কর্তপক্ষ। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক জানান তাকে পানিসমেন্ট দিয়ে বিষয়টি সংশোধন করে নেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের ঢেবঢেবি বাজারে অবস্থিত ‘ঢেবঢেবি বাজার কুলছুম ক্বওমি মাদ্রাসায়’ গত মার্চের ২৭ তারিখে শিক্ষক আবু সাঈদ বাড়ীর কাজ না লিখে অন্য লেখা জমা দেয়ার অপরাধে ঢেবঢেবি বাজারের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেনের পূত্র লাম মিয়া ওরফে লাল মিয়া (৭) কে অমানবিকভাবে মারপীট করে। সে ওই মাদ্রাসার দ্বিতীয় জামাতের শিক্ষার্থী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২মিনিট ৩০সেকেন্ডের মারপিটের ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যায় মাদ্রাসার শিক্ষক আবু সাঈদ টুপি মাথায় সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় শিক্ষার্থীর নিকট থেকে পড়া আদায় করছেন। তার বাম হাতে একটি খাতা বা বই ডান হাতে একটি বেত নিয়ে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর পর গোলাপি পাঞ্জাবি পরিহিত একজন শিক্ষকার্থীকে কষাঘাত করছেন। আরেকটি সাদা পাঞ্জাবি পড়া আরেকটি শিশু শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে গুতা মেরে মাথা নিচু করে মাটিতে ফেলে পশ্চাৎ দেশে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। এক পর্যায় অভিযুক্ত শিক্ষক রাগানিত্ব হয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাম হাত চেপে ধরে জোড়ে জোড়ে পেটাতে থাকেন। মার সহ্য করতে না পেরে ওই শিক্ষার্থী ‘মাগো’ বলে চিৎকার করে উঠে! এতেও ক্ষান্ত না হয়ে ওই শিক্ষক গায়ের জোড়ে শিশুটির উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে যান। এসময় শ্রেণীর অন্যান্য শিক্ষার্থীরা নিশ্চুপ হয়ে যায়। ওই মাদ্রাসার কোন শিক্ষাক বা শিক্ষার্থী গোপনে দেয়ালের ফুটো দিয়ে নির্যাতনের ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
নির্যাতনে শিকার শিশুটির পিতা মোতালেব হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, বাজারে ভিডিওটি দেখে ছেলেকে চিনতে পারি। নির্মম নির্যাতনের দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছি। বাড়ীতে গিয়ে ছেলের কাছে জানতে পারি হুজুরের ভয়ে বিষয়টি সে গোপন রেখেছে। এই হুজুর একই আচরণ করেছে আরো ৩/৪জন শিক্ষার্থীদের সাথে। হুজুররা শাসন করতেই পারে। তবে এমন অমানবিকভাবে মারপীট করা উচিৎ হয়নি। বিষয়টি মাদ্রাসা কর্তপক্ষকে জানালে তারা সুরাহা করে দিবে বলে জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাঈদ জানান, ঘটনাটি প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আগের। পরীক্ষা চলার সময়ে শিক্ষার্থী আমার সাথে বেয়াদবী করায় একটু শাসন করেছি। বিষয়টি নিয়ে মাদ্রা কর্তপক্ষ আমাকে পানিসমেন্ট দিয়ে সংশোধন করে নিয়েছে।
অপরদিকে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মৌলভী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক পাথরডুবি ইউনিয়নের হাবিবুর রহমানের পূত্র। তিনি দেড় বছর ধরে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় ওই শিক্ষার্থীর জ্যেঠাকে নিয়ে একটি মিটিং করা হয়েছে। মিটিং-এ শিক্ষক আবু সাঈদকে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে মোবাইলে তিনি নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা জানান, বিষয়টি আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি। ঘটনার সত্যতা পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে মাদ্রাসা চালু রাখা এবং শিশু নির্যাতনের অভিযোগসহ দুটি মামলা করা হবে।