করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী সকল প্রকার গণজমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী এবং চলমান সর্বাত্মক লকডাউনকে উপেক্ষা করে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে অষ্টমীর স্নান সম্পন্ন করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউনে ব্রহ্মপুত্র তীরে অষ্টমী স্নান লক্ষাধিক মানুষ জমায়েত হওয়ায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ১৯৪৫ সাল থেকে প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুল্ক পক্ষের অষ্টমী দিনে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী অষ্টমী স্নান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর এই দিনে নেপাল, ভুটান ও ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৩/৪লক্ষ পূন্যার্থীর সমাগম ঘটে ব্রহ্মপুত্র তীরে। সে মোতাবেক ২০এপ্রিল মঙ্গলবার অষ্টমী স্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ ছিল। বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী সকল প্রকার গণজমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা এবং চলমান লকডাউনে ব্রহ্মপুত্র তীরে অনুষ্ঠিতব্য অষ্টমীর স্নানের জন্য কোন প্রকার প্রস্তুতি না নিয়ে বরং অষ্টমী স্নান হবে না মর্মে জানায় উপজেলা প্রশাসন।
কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্রহ্মপুত্র তীরে পুটিমারী এলাকা থেকে রমনা ঘাট পর্যন্ত লক্ষাধিক পূন্যার্থী জমায়েত হয় এবং স্নান উৎসবে যোগ দেয়। সেখানে সামাজিক দুরত্ব রক্ষা কিংবা মাস্ক পড়ার কোন বালাই ছিল না। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে লকডাউনকে উপেক্ষা করে ব্রহ্মপুত্র তীরের অষ্টমী স্নান লক্ষাধিক মানুষ জমায়েত হওয়ায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বী পূন্যার্থীরা ব্রহ্মপুত্র পারে সমবেত হয় এবং স্নান উৎসবে যোগ দেয়। মঙ্গলবার সকালে বিশাল সমাবেশে চিলমারী থানার দুইজন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে। স্নান উৎসবে যোগ দেয়া জীবন চন্দ্র ও নয়ন চন্দ্র জানান, কোন করোনা-টরোনা নাই। আমাদের কোন মাস্ক-টাস্ক লাগে না। ভূরুঙ্গামারী থেকে আসা স্মৃতি রাণী ও কাউনিয়া থেকে আসা আদরী রাণী বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী ও বৃহৎ একটি পর্ব অষ্টমী স্নান। যা বছরে একদিন আসে, দিনটি আমাদের জন্য পাপ মোচনের দিন। যতই লকডাউন হোক আমাদের ধর্ম তো পালন করতে হবে। পূন্যার্থী বিশ্বনাথ জানায়, গত বছর প্রশাসনিক কারণে স্নান করতে পারি নাই। এবারে শান্তিপূর্ণভাবে স্নান করতে পেরেছি। ব্রাহ্মন পবিত্র চক্রবর্তী জানান, করোনায় আমাদের কোন সমস্যা হবে না, ভগবান আছে।
বাংলাদেশ পূঁজা উদযাপন পরিষদ চিলমারী শাখার সভাপতি ডাঃ সলিল কুমার সরকার জানান, অষ্টমী স্নানের বিষয়ে ইউএনও স্যারের কাছে গিয়েছিলাম তিনি লকডাউনের কারণে অনুমতি দেননি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্নান না করতে মাইকিং করা হয়নি। কিংবা আমাদেরকেও মাইকিং করতে বলা হয়নি।
চিলমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র তীরে যাতে জনসমাবেশ না ঘটে সে লক্ষে গত রাত থেকে বিভিন্ন মোড়ে আমাদের টহল অব্যাহত ছিল। রাতে ইউএনও মহোদয়সহ আমি নিজে ঘাটে ঘাটে গিয়ে সকলকে বারন করা হয়েছে। বারন করে অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে অলি-গলি দিয়ে কিছু লোক চলে গেছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ, ডব্লিউ, এম রায়হান শাহ্ বলেন, গত রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে লোকজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মানুষ যদি নিজ থেকে সচেতন না হয় তাহলে কার কি করার আছে। আমাদের পক্ষ থেকে যা করার তা করেছি।