সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা সীমান্তে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমজমাট ভাবে চলছে চোরাচালান বাণিজ্য। পৃথক অভিযান চালিয়ে এক ইউপি সদস্যসহ ১৪ জন চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র্যাব। এছাড়া ২টি ইঞ্জিনের নৌকা ও ৩টি পিকআপসহ অবৈধ চিনি ও মাদক দ্রব্যের চালান জব্দ করা হয়েছে।
এব্যাপারে থানায় দায়ের করা হয়েছে পৃথক মামলা। তবে সীমান্ত এলাকায় সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামীদের দৌড়াত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্ভর) রাত ২টার পর থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন, চারাগাঁও সীমান্তের জঙ্গলবাড়ি, কলাগাঁও, এলসি
পয়েন্ট, বাঁশতলা, লালঘাট, বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট, টেকেরঘাট সীমান্তের চুনাপাথর খনি প্রকল্প, বড়ছড়া, বরুঙ্গা ছড়া, রজনী লাইন, চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারোঘাট, রাজাই, কড়ইগড়া, বারেকটিলা, লাউড়গড় সীমান্তের
যাদুকাটা নদী, সাহিদাবাদ, দশঘর, পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে এক যোগে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে কয়লা ও পাথরসহ চিনি, সুপারী, কসমেটিকস, নাসির উদ্দিন বিড়ি, মাদকদ্রব্য ও গরু পাচাঁর শুরু করে চোরাকারবারীরা। কিন্তু
এব্যাপারে কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ গত শুক্রবার (১ সেপ্টেম্ভর) ভোর ৫টায় পাশের মধ্যনগর উপজেলার মনাই নদীর জামগড়া খালে অভিযান চালিয়ে ২৪লাখ ৫শত টাকা মূল্যের ১৬১ বস্তা (৮ হাজার ৫ কেজি) ভারতীয় অবৈধ
চিনি বোঝাই ১টি ইঞ্জিনের নৌকাসহ ওই উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগী জহুরুল আলম, কালু মিয়া, আহাদ মিয়া, মারুফ মিয়া, বিল্লাল হোসেন ও মুক্তার হোসেনকে হাতেনাতে
গ্রেফতার করে পুলিশ। অপরদিকে সকাল সাড়ে ৬টায় ছাতক উপজেলার তাজপুর গ্রামের রাস্তা থেকে ১৬৮ বস্তা (৮হাজার ৪শত কেজি) অবৈধ চিনি বোঝাই ৩টি পিকআপ ভ্যানসহ চোরাকারবারী আব্দুল কাইয়ুম কে হাতেনাতে
গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরআগে গত বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাত ১১টায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ধোপাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৯২ বোতল মদসহ ফিরোজ মিয়া, আমীর আলী ও আলী নুর নামের ৩ পেশাদার
মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র্যাব। অন্যদিকে এদিন ভোরে মধ্যনগর উপজেলার উত্তর বংশিকুন্ডা ইউনিয়নের বাঙ্গলভিটা গ্রাম সংলগ্ন খালে অভিযান চালিয়ে ৮০ বস্তা অবৈধ চিনি বোঝাই ১টি ইঞ্জিনের নৌকাসহ চোরাকারবারী রনি
মিয়া, এরশাদ মিয়া ও আবুল কাসেমকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তাহিরপুর সীমান্তে একাধিক মামলার আসামীরা প্রতিদিন লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে বিভিন্ন মালামাল অবাধে পাচাঁর করলেও দেখার কেউ নাই।
এব্যাপারে তাহিরপুরে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক আবুল বাশার খান নয়ন, ফজলু সরদার, ইউপি সদস্য ধন মিয়া ও বাবুল মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন- একাধিক মামলার আসামী লালঘাট গ্রামের ইয়াবা কালাম, রুবেল মিয়া,
খোকন মিয়া, লাকমা গ্রামের রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, দুধের আউটা গ্রামের জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, শ্রীপুর কুড়েরপাড় গ্রামের নেকবর আলী, জঙ্গলবাড়ি গ্রামের লেংড়া জামাল, হযরত আলী, আইনাল মিয়া, কলাগাঁও
গ্রামের রফ মিয়া, সাইফুল মিয়া, বাঁশতলা গ্রামের আনোয়ার হোসেন বাবলু, চাঁনপুর গ্রামের আবু বক্কর, লাউড়গড় গ্রামের মোহাম্মদ মিয়া, জসিম মিয়া, সাহিদাবাদ গ্রামের বায়েজিদ মিয়া ও তাদের কথিত গডফাদার সিন্ডিকেডের মাধ্যমে রাজস্ব
ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও চুনাপাথরসহ বিভিন্ন মালামাল পাঁচার করে নিজেরা ব্যবসা করছে এবং পুলিশ, সাংবাদিক ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে লাখলাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে হয়েগেছে কোটিপতি। তাদের কারণে
সম্প্রতি লাকমা ও যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে চোরাচালান করতে গিয়ে ২জনের মর্মান্তিক মৃৃত্যু হয়েছে। এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে ওদের দৌড়াত্ব বেড়েই চলেছে।
মধ্যনগর থানার ওসি এমরান হোসেন সাংবাদিকদের জানান- এই উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে রাতের আধাঁরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চিনিসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করে নৌকা বোঝাই করার সময় অভিযান চালিয়ে
চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করেছি। এব্যাপারে থানায় পৃথক মামলা দায়ের করে সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাঘারে পাঠানো হয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।