কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ শিশু সন্তানকে আকড়ে (হাতে) ধরেও বাঁচাতে পারেননি পিতা। আজিজুল হক (৩০) নৌকা ডুবির সময় এক হাতে শিশু সন্তান, অপর হাতে স্ত্রীকে নিয়ে স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে তীরে পৌঁছে
দেখেন স্ত্রী চায়না বেগম (২৪) জীবিত থাকলেও শিশু সন্তান আয়শা সিদ্দিকা (১৪ মাস) তার হাতেই মৃত অবস্থায় রয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি বুধবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় তিস্তা নদী বেষ্টিত কুড়িগ্রামের উলিপুর
উপজেলার বজরা ইউনিয়নের খামার দামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঝের চর এলাকায় ঘটেছে। অপর দিকে নৌকা ডুবির ঘটনায় একই পরিবারের চার জন নিখোঁজ থাকায় বাড়িতে স্বজনদের চলছে শোকের
মাতম। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাত ৯টা পর্যন্ত ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, নৌকা ডুবির ঘটনায় একই পরিবারের চার জন নিখোঁজ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে
সরেজমিন উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরায় গিয়ে দেখা যায়, আনিচা বেগম (৬০) বাড়িতে বিলাপ করছেন। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, নৌকা ডুবিতে তার সব শেষ হয়ে গেছে।
ছেলে আনিছুর রহমান (২৮), পুত্রবধু রুপালী বেগম (২৩), নাতিন আইরিন (৯) ও ইরা মনি (১০) ও একই এলাকার কয়জাল হকের শিশু সন্তান কুলসুম (আড়াই বছর) নিখোঁজ রয়েছেন।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফিরে পাবার জন্য স্বজনরা নদীর তীরে অপেক্ষা করছেন। শিশু সন্তানকে আকড়ে ধরেও বাঁচাতে না পারা আজিজুল হক কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, নৌকা ডুবে যাবার পর তিনি ভেসে উঠে দেখতে পান
তার শিশু সন্তান আয়শা ভেসে আছে। এ সময় তিনি এক হাত দিয়ে তাকে ধরেন। একই সময় স্ত্রী চায়না বেগম ভেসে উঠলে তিনি তাকেও ধরেন। এরপর খুব কষ্ট করে স্রোতের বিপরীতে দুজনকে দুই হাতে ধরে নদীর তীরে
আসেন। স্থানীয়দের সহায়তায় উপরে উঠে দেখেন স্ত্রী বেঁচে থাকলেও তার হাতে থাকা শিশু সন্তানের দেহে প্রাণ নেই। তার অপর শিশু শামীম (৫) নিখোঁজ রয়েছেন।
এলাকাবাসী ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজন সূত্রে জানা গেছে, বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা খেয়াঘাট এলাকা থেকে জয়নাল আবেদীনের পরিবার ও তাদের আত্মীয়স্বজন মিলে বুধবার সন্ধ্যার দিকে ২৬জন ব্যক্তি একটি
নৌকায় উঠে। তাঁরা নৌকা যোগে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পাওটানা গাবরের চর এলাকায় জয়নাল আবেদীনের মেয়ের শ্বশুর বাড়ীতে ঈদ পরবর্তী দাওয়াতে যাচ্ছিলেন। নৌকাটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কিছু
সময় পর মাঝ নদীতে হঠাৎ দমকা হাওয়ার কবলে পরেন। এ সময় তিস্তার প্রবল স্রোতে নৌকাটি উলটে গিয়ে ডুবে যায়। নদীতে সাঁতার কেটে ৮জন তীরে উঠতে পারলেও বাকীরা ডুবে যান।
পরে স্থানীয়রা তাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে উলিপুর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কাজে নামেন। এসময় নদী থেকে আরও ১০ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার
করা হয়। কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে তাদের দেখানো বিভিন্ন জায়গায় ডুবুরি দল অভিযান পরিচালনা করছেন। আমরা প্রাণপন চেষ্টা করছি কিন্তু এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৬ জনের কোন সন্ধান মেলেনি।