আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, এ বছর আমতলীতে তরমুজের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯’শ ৯০ হেক্টর। ওই লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে। গত বছর তরমুজ চাষ হয়েছিল এক হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪’শ ৯০ হেক্টর জমিতে তারমুজ চাষ বেশী হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে বিগত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষীরা বেশ লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলে তরমুজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তারা।
এ বছর তরমুজরে বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম থাকায় বিগত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠার স্বপ্ন বুনছিল চাষীরা। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আগামী সোমবার থেকে দেশব্যাপী সাত দিনের লকডাউন ঘোষনা দিয়েছেন সরকার। এ লকডাউনের ঘোষনায় চাষীরা হতাশ হয়ে পরেছেন। গত বছর ভালো ফলন হলেও লকডাউনের কারনে অনেক চাষি কম মুল্যে তরমুজ বিক্রি করতে হয়েছে। আবার অনেক চাষীর তরমুজ বিক্রি করতে পারেনি। ফলে খেতেই নষ্ট হয়েছে। এ বছরও একই অবস্থা হবে বলে ধারনা করছেন তারা।
এছাড়া লকডাউনের কারনে এ অঞ্চলের তরমুজ ঢাকা, গাজীপুর, বগুড়া, কুমিল্লা, গাইবান্দা, টাঙ্গাইল ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী বন্ধ হয়ে যাবে ধারনা করছেন চাষী ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এতে আরো লোকসানে পড়বে চাষীরা।
আমতলীর আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের তরমুজ চাষী আলমগীর আকন, কামাল হাওলাদার, শহীদুল গাজী, মাহবুব মাতুব্বর, লিমন গাজী ও মাহাতুল মল্লিক বলেন, আবার লকডাউন এসেছে। কি হয় আল্লাই জানে। এ বছর আশা করেছিলাম ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করবো কিন্তু তা হয় কিনা জানিনা। তারা আরো বলেন, লকডাউনের কারনে গত বছর তরমুজ কম দামে বিক্রি করেছি। বিক্রি করতে না পারায় অনেক তরমুজ ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে। এ বছর এমন অবস্থা হলে সরকারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তরমুজ বিক্রির দাবী জানান তারা।
কুকুয়া ইউনিয়নের চুনাখালী গ্রামের ওহাব মৃধা, বাহাউদ্দিন হাওলাদার ও রাজ্জাক মৃধা বলেন, গত বছর লকডাউনের কারনে পাইকার এসেও তরমুজ ক্রয় করেনি। তাই কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এ বছরও লকডাউন থাকলে তরমুজ নিয়ে বিপাকে পরতে হবে।
আমতলী গাজীপুর বন্দরের তরমুজ ব্যবসায়ী মোঃ সোহেল রানা বলেন, লকডাউন থাকলে পরিবহন সমস্যায় দুর-দুরান্ত থেকে ব্যাপারীরা তরমুজ কিনতে আসবে না। এতে স্থানীয় বাজারে তরমুজের চাহিদা কমে যাবে। ফলে দামও কমবে। সব মিলিয়ে তরমুজ নিয়ে চাষীরা মারাত্মক সমস্যায় পরবে। লকডাউনের খবর শুনে ক্ষেত থেকে তরমুজ কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, লকডাউনের মধ্যে তরমুজ পরিবহনে যাতে সমস্যা না হয় সেই দিকে প্রশাসনকে নজর দেয়ার দাবী জানাই।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, লকডাউনের কারনে তরমুজ পরিবহন ও বিক্রিতে সমস্যা হলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আমতলীর তরমুজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হবে। কৃষকদের যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেই দিকে যথাযথ খেয়াল রাখা হবে।