সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তকে চোরাচালানের নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা। পৃথক অভিযান চালিয়ে ঈদের দিনসহ গত ৫দিনে ভারতীয় মদসহ ৩জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে বিজিবি।
কিন্তু সোর্স ও চাঁদাবাজরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। তারা সীমান্ত এলাকায় সিন্ডিকেড তৈরি করে সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন কয়লা, পাথর, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, কাঠ, বাঁশ, চাল, তক্ষক ও অস্ত্র পাচাঁর করছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার সীমান্ত বন্ধ রাখাসহ সারাদেশে কঠোর লকডাউন জারি করেছে। কিন্তু সোর্স ও চাঁদাবাজরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে তাদের বাণিজ্য দাপটের সাথে চালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের গত বুধবার (২১ জুলাই) ঈদেরদিন ভোর থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের রঙ্গাছড়া ও জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে সোর্স লেংড়া জামাল ও মস্তু মিয়ার নেতৃত্বে ভারত থেকে মদ, ইয়াবা, কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু হয়।
এখবর পেয়ে সন্ধ্যায় রঙ্গাছড়া এলাকায় বিজিবি অভিযান চালিয়ে ভারত থেকে পাচাঁরকৃত ৭ বোতল মদসহ মাদক ব্যবসায়ী নুরু মিয়া (৪০) কে গ্রেফতার করে।
এরআগে গত রোববার (১৮ জুলাই) বিকেলে টেকেরঘাট সীমান্তের চুনাপাথর খনি প্রকল্প, বড়ছড়া, বুরুঙ্গাছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে সোর্স ইসাক মিয়া ও কামাল মিয়ার নেতৃত্বে চোরাকারবারীরা ভারত থেকে কয়লা, ইয়াবা ও মদ পাচাঁর করে।
এখবর পেয়ে বিজিবি অভিযান চালিয়ে বড়ছড়া এলাকা থেকে ৪ বোতল ভারতীয় মদসহ চোরাকারবারী জনিক মিয়া (২২) কে গ্রেফতার করে। অপরদিকে গত শনিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারোছড়া,
রাজাই, কড়ইগড়া ও বারেকটিলা এলাকা দিয়ে সোর্স রফিকুল ইসলাম ও আবু বক্কর, আলমগীরগং পৃথক ভাবে মদ, ইয়াবা, বিড়ি, গরু ও অস্ত্র পাচাঁর করে। এখবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টায় টেকেরঘাট সীমান্তের রজনীলাইন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮ বোতল ভারতীয় মদসহ মাদক ব্যবসায়ী জাহের আলী (২০) কে গ্রেফতার করে বিজিবি।
এছাড়াও প্রতিরাতে বালিয়াঘাট ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা সোর্স ইয়াবা কালামের লালঘাটের বাড়ির সামনে অবস্থিত পাকা রাস্তার মাথায় চেয়ার নিয়ে বসে থেকে ভারত থেকে কয়লা পাচাঁরের জন্য চোরাকারবারীদের সহযোগীতা করে।
এজন্য পাচাঁরকৃত ১বস্তা অবৈধ কয়লা (৫০ কেজি) থেকে বিজিবির নামে ১২০টাকা, সাংবাদিকদের নামে আব্দুর রাজ্জাক ৫০টাকা ও তোতলা আজাদকে ২০টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। আর এই চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স ইয়াবা কালাম, জিয়াউর রহমান জিয়া ও মানিক মিয়া। অপরদিকে লাউড়গড় ও চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে সোর্স রমজান মিয়া,
শফিকুল ইসলাম ভৈরব, খোকন মিয়া, শহিদুল্লাহ, আনোয়ার মিয়া, বাবুল মিয়া, নুরু মিয়া, জজ মিয়া, আমিনুল মিয়া, শহিদ মিয়া, নবীকুলগং ভারত থেকে কয়লা, পাথর, মদ, বিড়ি, ইয়াবা, চাল ও তক্ষক পাচাঁর করলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এব্যাপারে বালিয়াঘাট ক্যাম্পের সোর্স ইয়াবা কালাম বলেন- আমার বিরুদ্ধে ১০-১৫টা মামলা হওয়ার পরও কিছুই হয়নি, পত্রিকায় লেখলে কি হবে। বিজিবি, রাজ্জাক ও আজাদ ভাই আমার সাথে আছে।
চোরাকারবারী খোকন মিয়া বলেন- চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে পাঁচারকৃত ১ নৌকা চোরাই কয়লার (১৫টন) জন্য রাজ্জাক ভাইকে ২হাজার, আজাদ ভাইকে ১৫শ টাকা দেই। তারাই বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিক ম্যানেজ করে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্নেল তসলিম এহসান সাংবাদিকদের বলেন- তাহিরপুর সীমান্তে পৃথক অভিযান চালিয়ে ভারতীয় মদসহ ৩জনকে গ্রেফতার করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।