মেয়ে অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করায় বিবাদীদের উল্টো মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে অপহৃত মেয়ের পিতা শাহজাহান গত প্রায় এক মাস যাবৎ কারাভোগে আছেন।
অপহৃত মেয়ের পিতা শাহজাহান শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের জড়াকুড়া গ্রামের মৃত সিরাজুল হকের ছেলে।
তিনি তার মেয়েকে অপহরণকারি মামলার ২ নং আসামী আতিকুল ইসলামের দায়ের করা একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে এখন শেরপুর জেলা কারাগারে রয়েছেন।
অপরদিকে বিবাদী আতিকুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের ছেলে।
প্রধান আসামী ছামিউল হক (২৮) উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের ছোট মালিঝিকান্দা গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে। সম্পর্কে শাহজাহান ছামিউল হকের মামা।
ছামিউল হক ঢাকার আশুলিয়ায় বসবাস করেন।অপহৃত মেয়ের বাবা শাহজাহানের দাযের করা অপহরণের মামলার সুত্রে জানা যায়, গত রমজান মাসে ছামিউল হক আশুলিয়া থেকে তার ২ বন্ধুকে নিয়ে জড়াকুড়া গ্রামে মামা শাহজাহানের বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
গত ৪মে ছামিউল হক তার মামাতো বোন কিশোরী কন্যা ও ছোট এক ভাইকে নিয়ে শপিংয়ের নাম করে কৌশলে বাড়ি থেকে বাজারের উদ্দেশ্য বের হন ।
তারা সময় মতো বাড়িতে ফিরে না আসলে বাড়ির লোকজন তাদের খুঁজাখুঁজি করতে থাকে। এদিকে ছামিউল হক কৌশলে ওই কিশোরীকে জোরপুর্বক আশুলিয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে রওয়ানা হয়।
কিন্তু কিশোরীর আত্মচিৎকারে আশুলিয়ায় নিতে না পেরে শেরপুর জেলা সদরে ছামিউল হক বাঁধাগ্রস্ত হয়। পরে রাতে জেলা সদরের একটি বাড়িতে নেয়া হয় তাকে।
সে বাড়িতে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থহলে অবশেষে শেরপুরের খোয়ারপাড় মোড়ে ওই কিশোরী ও তার ছোটভাইকে রেখে কৌশলে গা- ঢাকা দিয়ে ছামিউল হক এবং তার ২ বন্ধু পালিয়ে যায়।
এদিকে খুঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন খোয়ারপাড় মোড়ে এসে রাতে ওই কিশোরী ও তার ছোট ভাইকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
পরে ওই কিশোরীর মা জরিনা বেগম বাদি হয়ে ৩ জনকে আসামী করে এ বিষয়ে শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ৯মে একটি পিটিশন মামলা নং১৯৮/২১নং দাযের করেন।
আদালত মামলাটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
উক্ত নির্দেশ বলে থানা পুলিশ মামলাটি আমলে নিলেও ১আগষ্ট রবিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আসামীরা পালিয়ে থাকায় কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি।
অপরদিকে বাদীর অভিযোগ, পালিয়ে থাকা আসামীরা অপহৃত মামলা তুলে নিতে বাদী ও তার পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও প্রাননাশের হুমকি প্রদর্শন করে আসছে।
তাদের দাবি অনুযায়ী মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়া গত ২০ জুন আশুলিয়া চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে অপহরন মামলার ২ নং আসামী আতিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অপহৃত কিশোরীর বাবা শাজাহান ও ভাই জামান মিয়াকে আসামী করে একটি মিথ্যা প্রতারনা মামলা নং ৫৭৯ / ২১ দায়ের করে।
ওই মামলায় বিচারক আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। ওই গ্রেফতারী পরোয়ানায় বলে গত ৭ জুলাই ঝিনাইগাতী থানা পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে।
আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে কৃষক শাহজাহান গত প্রায় ১ মাস যাবৎ জেলা কারাগারে আছেন।
অপহৃত কিশোরীর মা জরিনা বেগম জানান, মিথ্যা মামলায় তার স্বামী শাহজাহানকে কারাগাড়ে পাঠানোর পর তার দায়ের করা মামলার আসামীরা মামলা তুলে নিতে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে।
এতে তার স্বামী শাহজাহান কারাবাসের পাশাপাশি সে এবং তার পরিবারের অন্যান্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অপহরণ মামলার আসামিরা এলাকার বাইরে থাকায় তাদের তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান জানান, অপহরণ মামলার আসামীরা আত্মগোপনে থাকায় তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও অভিযান অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে অপহৃত মামলার বাদী জরিনা বেগম মিথ্যা মামলায় আটককৃত তার স্বামীকে মুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।