দিনাজপুরের পার্বতীপুর মধ্যপাড়া খনিতে পাথর উৎপাদন ও খনি উন্নয়নের পাশাপাশি খনি এলাকাবাসীদের জন্য সামাজিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে খনির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)।
খনির সম্মুখে সমাজ কল্যাণ সংস্থা জিটিসি চ্যারিটি হোম প্রতিষ্ঠা করে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সেই সাথে প্রতি মাসে খনি শ্রমিকদের উচ্চ শিক্ষায় অধ্যায়নরত সন্তানদের মাসিক শিক্ষাউপবৃত্তি এবং ওই এলাকার নন এমপিভুক্ত মধ্যপাড়া মহাবিদ্যালয়কে মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আর্থিক ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে জিটিসি।
পার্বতীপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত একটি গ্রাম মধ্যপাড়া। সেই গ্রামটি আজ নিজ পরিচয়ে দেশ বিদেশে পরিচিত। কেননা সেখানে রয়েছে দেশের একমাত্র এবং বৃহৎ উৎপাদনশীল মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনি। বাংলাদেশের খনিজ সম্পদে সম্বৃদ্ধ পার্বতীপুর উপজেলার একটি সুনামধন্য এলাকা এই হরিরামপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া। ৩ হাজার ৮৮৮ বর্গ কিলোমটিার আয়তনের এই ইউনিয়নে রয়েছে ১৪ টি গ্রাম। প্রত্যন্ত এই জনপদে কঠিন শিলা খনির কারনে আজ এখানকার অর্থনীতি অন্য গ্রামীণ জনপদ থেকে অনেকটাই উন্নত।
২০০৭ সালে এ খনি থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। এরপর আশায় বুক বাধে খনি এলাকার মানুষ। এই খনিতে স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থান হবে, পাল্টে যাবে এই জনপদের অর্থনীতির চেহারা। কিন্তু সেই স্বপ ্নতাদের স্বপ্নই রয়ে যায় দীর্ঘ ৬ টি বছর, এই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা খনিটি শত কোটি টাকার উপরে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধের উপক্রম হয়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ডে মধ্যপাড়ার উন্নত শিলা ব্যবহার বাড়াতে ২০১৩ সালে খনিটির দায়িত্ব তুলে দেন দেশীয় একমাত্র মাইনিং কোম্পানী জার্মানীয়া কর্পোরেশন লিমিটেড ও বেলারুশ কোম্পানী ট্রেস্ট এসএসএর যৌথ প্রতিষ্ঠান জার্মানীয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি’র) হাতে। সরকারের এই লোকসানী প্রতিষ্টানটিকে লাভের দিকে নিয়ে যেতে দায়িত্ব গ্রহনের শুরু থেকেই জিটিসি খনির উৎপাদন এবং উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে খনির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী তিন শিফট চালুকরে এই খনির পাথর উৎপাদন ইতিহাসে রেকর্ড গড়ে। ফলে পাথর খনিটি দুই অর্থ বছরের লাভের মুখ দেখেছে। খনিটি এখন সরকারের লাভজনক প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি খনির পাথর উৎপাদন ও উন্নয়ন এর পাশাপাশি খনির সন্মুখে চ্যারিটি হোম স্থাপন করে বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণ মূলক কর্মকান্ড এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ সেবা দিয়ে এলাকাবাসীদের পাশে দাড়িয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে।
এলাকার মানুষ বলছে ইতি পূর্বে এই খনি এলাকাবাসীর জন্য এমন সামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে এবং বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কেউ তাদের পাশে দাড়ায়নি। জিটিসি’র এই সেবামূলক কর্মকান্ড একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর জন্য এক দৃষ্টান্ত হতে পারে।
মধ্যপাড়া পাথর খনির উন্নয়ন ও উৎপাদন কাজে নিয়োজিত জার্মানীয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) পাথর খনির উন্নয়ন ও উৎপাদন করে খনির ইতিহাসে নয়া রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। খনি কার্যক্রমের পাশাপাশি খনির এলাকাবাসীদের জন্য সামাজিককার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে খনি সন্মুখে সমাজকল্যাণ সংস্থা “ জিটিসি চ্যারিটি হোম” স্থাপন করা হয়েছে। চ্যারিটি হোমে একজন অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তার দ্বারা প্রতিদিন খনি এলাকার ৪০/৫০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সেই সাথে প্রতি মাসে খনি শ্রমিকদের উচ্চ শিক্ষায় অধ্যায়নরত সন্তানদের মাসিক শিক্ষাউপবৃত্তি, নন এমপিভুক্ত মধ্যপাড়া মহাবিদ্যালয়কে মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আর্থিক ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে জিটিসি।
চ্যারিটি হোমে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ১০ কিলোমিটার দুরপাচঁপুকুর গ্রাম থেকে ডাক্তার দেখাতে আসা ৭০ বছর বয়সী বিধবা বৃদ্ধা মোছাঃ সফিরন বেওয়ার সাথে। তিনি বলেন, মুই অনেক দিন থেকে অসুখে ভুগছো, সরকারী হাসপাতাল মেলা দুর, যাবারও পারোনা। মানুষের কাছে শুননু, এই খনির জিটিসি নাকি এটি একটা বড় ডাক্তার বসাইছে হামার এলাকার মানুষের চিকিৎসা দিবারতনে। তাই আইছু বাবা, ডাক্তার মোক দেখলো। ঔষুধ দিল, মনে হছে এবার অসুখ ভালো হবে মোর। আল্লাহ জিটিসি’র ভালো করুক।
জিটিসি চ্যারিটি হোমে চিকিৎসা নিয়েছেন খনি এলাকার পাইকাড় পাড়া গ্রামের অমিতা খাতুন (৭০)। তিনি জানান, আমি কাশিঁ এবং সর্দি নিয়ে চ্যারিটি হোমে ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার আন্তরিকতার সাথে আমার সমস্যার কথা শুনেছেন। তার পর ঔষুধ দিয়েছেন। সেই ঔষুধেই আমি সুস্থ্য হয়েছি। দ্বিতীয়বার আর যেতে হয়নি।
দীর্ঘ দিন ধরে গায়ে ব্যথা ও প্রস্রাবের সমস্যা নিয়ে খনি এলাকার শাহাৎত হোসেন (৭৫) দেড় মাস আগে জিটিসি’র চ্যারিটি হোমে এসে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছেন । তারসাথে কথা বলে জানাযায়, তিনি লোক মুখে শুনে জিটিসি চ্যারিটি হোমে এসে ডাক্তার দেখিয়ে ঔষুধ খেয়ে সুস্থ্য হয়েছে। তিনি এমন ভালো কাজের জন্য জিটিসকে ধন্যবাদ জানান।
চ্যারিটি হোমে শিক্ষা উপবৃত্তি গ্রহন করতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোছা ঃ সুলতানা পারভিন বলেন, আমার বাবা প্রায় ২০-২২ বছর ধরে এই খনিতে চাকুরী করে আসছেন। ইতিপুর্বে খনি শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে জিটিসি’র মত এমন করে কেউ কখনো ভাবেনি। প্রতি মাসে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করে উচ্চ শিক্ষায় সহযোগিতা করায় তিনি জিটিসি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুর রহমান শাহ বলেন, গ্রামীণ এই জনপদে স্বাস্থ্য সেবা নিতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে উপজেলা সদর হাসপাতাল এবং ১৫ কিলোমিটার দুরে ফুলবাড়ী হাসপাতালে যেতে হয়। জিটিসি চ্যারিটি হোম স্থাপানের মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তার দ্বারা এলাকার গণমানুষের স্বাস্থ্য সেবায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরামর্শ সেবা দিয়ে যে অবদান রাখছে তা নজিরবিহীন।
জিটিসি চ্যারিটি হোম নিয়ে কথা হয় জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর নির্বাহী পরিচালক জাবেদ সিদ্দিকীর সাথে; তিনি জানান, এই খনির জন্য এলাকাবাসীর অনেক ত্যাগ এবং অবদান রয়েছে। খনি এলাকার মানুষ এতদিন এই খনিটিকে লোকসানী প্রতিষ্ঠান হিসেবেই দেখেছে। বর্তমানে জিটিসি’র হাত ধরে পাথর খনি পর পর দু বছর লাভের মুখ দেখেছে। এলাকাবাসীর এই খনি নিয়ে প্রত্যাশা অনেক। আমরা এই পাথর খনিকে সরকারের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছি। সেই সাথে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের কোম্পানী খনি শ্রমিকদের উচ্চ শিক্ষায় অধ্যায়নরত সন্তানদের শিক্ষাউপবৃত্তি, এলাকাবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকান্ডে তাদের পাশে দাড়ানোর জন্য একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে জিটিসি চ্যারিটি হোম প্রতিষ্ঠা করেছে।