মোজাম্মেল আলম সুনামগঞ্জের অবহেলিত একটি গ্রামের নাম গিরিশনগর। এই গ্রামের বেশির ভাগ টিউবওয়েলের পানিতে রয়েছে আর্সোনিক।
আর যুগযুগ ধরে ওই সব টিউবওয়েলের পানি পান করার কারণে আর্সোনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে গ্রামের বেশির ভাগ অসহায় মানুষ।
ইতিমধ্যে আর্সোনিকে আক্রান্ত হয়ে মোখলেসুর রহমান ফরাজী নামের ১জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারপরও অবহেলিত গিরিশনগর গ্রামের অসহায় মানুষের এই সমস্যা দেখার কেউ নেই।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে অবস্থিত গিরিশনগর গ্রাম। প্রায় ২ যুুগ পূর্বে ওই গ্রামের সব কয়েকটি নলকুপের পানিতে আর্সোনিক ধরা পড়ে।
তখন থেকে ওই গ্রামটিতে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিশুদ্ধ পানির বিকল্প কোন ব্যবস্থা না পাওয়ার কারণে গ্রামের অসহায় মানুষ বাধ্য হয়ে আর্সোনিক যুক্ত টিউবওয়েলের পানিসহ পুকুরের পানি পান করে।
এর ফলে গ্রামটির প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার আর্সোনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় প্রায় দেড় যুগ আগে ইউনিসেফ কর্তৃক একটি আর্সোনিকমুক্ত পানির ফিল্টার স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু ২বছর যেতে না যেতেই সেই ফিল্টারটি বিকল হয়ে যায়।
এরপর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক আরো ১টি পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়। বর্তমানে সেটিও অচল হয়েপড়েছে। যার ফলে অবহেলিত গিরিশনগর গ্রামের অসহায় মানুষ বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর আয়রনযুক্ত নলকুপের পানি ও পুকুরের পানি ব্যবহার করছেন।
এব্যাপারে গিরিশনগর গ্রামের আর্সোনিক রোগে আক্রান্ত মনির হোসেন বলেন- দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত আর্সোনিকের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছি। এই রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে জায়গাজমিসহ সব বিক্রি করে আজ আমি নিঃস্ব।
তারপরও এই অভিশাপ থেকে রক্ষা পাইনি। বতর্মানে আমার বাম হাতে পচন ধরেছে। একই গ্রামের আকাশ ফরাজী বলেন- গত বছর আমার বাবা মোখলেসুর রহমান ফরাজী আর্সোনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অনেক চিকিৎসা করেছি কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারিনি। আমাদের গ্রাম
জুড়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির খুবই সংকট। একই গ্রামের আর্সোনিক রোগে আক্রান্ত ইলিয়াস ফরাজী, গিয়াস উদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন, বদরুজ্জামান, মতিউর রহমান, নুর মোহাম্মদ, মুজিবুর রহমানসহ আরো অনেকে বলেন- আমরা গিরিশনগর গ্রামের শতশত অসহায় মানুষ প্রাণঘাতী আর্সোনিক
রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন যাবত সীমাহীন কষ্টের মাঝে আছি। আমাদের সব স্বপ্ন ও আশা ভরসা ভেঙ্গে চুরমার হয়েগেছে। দুই যুগ ধরে আয় উপার্জন বন্ধ। তাই চিকিৎসা করতে পারছিনা। কিন্তু আমাদের এই সমস্যা দেখার কেউ নাই। এব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
উপ-সহকারী প্রকৌশলী আক্কাস আলী সাংবাদিকদের বলেন- গিরিশনগর গ্রামে আর্সোনিকের মাত্রা একটু বেশি। কিন্তু আর্সোনিকের জন্য কাজ করার মতো আমাদের এখানে আলাদা ভাবে কোন প্রকল্প নাই। তবে কিছুদিন পর আমাদের এখানে কিছু পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।