মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকাগুলোতে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে চোরাকারবারীরা। তারা সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে মাদকদ্রব্য, বিস্ফোরক, পাথর, বিড়ি ও কয়লাসহ বিভিন্ন প্রকার মালামাল পাচাঁর করার পর
সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে চাঁদাবাজি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এব্যাপারে বিজিবি, পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে নিয়ে জানা গেছে- জেলার চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত তাহিরপুর। এই উপজেলার বাগলী, বড়ছড়া ও চারাগাঁও সীমান্ত এলাকায় ৩টি শুল্ক
স্টেশন থাকার পরও সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন অবৈধ ভাবে ভারত থেকে চোরাই কয়লা ও পাথর পাঁচার করছে চোরাকারবারীরা। প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (২৮ ডিসেম্ভর) ভোরে বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট ও টেকেরঘাট সীমান্তের চুনাপাথর
খনিপ্রকল্প এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী ইয়াবা কালাম, রতন মহলদার, ইদ্রিস আলী, মানিক মিয়া, ইসাক মিয়াগং ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বিপুল পরিমান কয়লা পাচাঁর করে বড়ছড়া শুল্কস্টেশনের বিভিন্ন ডিপুতে নিয়ে মজুত করে। তার মধ্যে আধা মেঃটন অবৈধ কয়লা জব্দ করেছে বিজিবি। তার
আগে একই ভাবে গত ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চাঁনপুর ও টেকেরঘাট সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারী কামাল মিয়া ও ইসাক মিয়াগং ভারত থেকে কয়লা পাচাঁর করার পর ২মেঃটন অবৈধ কয়লা আটক করে বিজিবি। অপরদিকে ২৫ ডিসেম্ভর রাত ১১টায় বালিয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারী ইয়াবা
কালাম মিয়া, জিয়াউর রহমান জিয়া ও রতন মহলদারগং ভারত থেকে কয়লা পাচাঁরের পর অভিযান চালিয়ে ৩ মেঃটন কয়লা আটক করে কিন্তু চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এই উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, জঙ্গলবাড়ি ও লামাকাটা এলাকা দিয়ে
চোরাকারবারী লেংড়া জামাল, সাইকুল মিয়া, রফ মিয়া, হাসিম মিয়া ও আনোয়ার মিয়াগং প্রতিদিন অবৈধ ভাবে ভারত থেকে কয়লা ও পাথর পাচাঁর করলেও এব্যাপারে নেওয়া হয়না কোন পদক্ষেপ। একারণে চোরাকারবারীরা সিন্ডিকেডের মাধ্যমে কয়লা পাচাঁরের পর সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির
নাম ভাংগিয়ে করছে অপেন চাঁদাবাজি। এছাড়া একই ভাবে লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী ও শাহ আরেফিন মাজারের সড়ক পথে ভারত থেকে প্রতিদিন অবাধে শতশত মে:টন কয়লা ও পাথর পাচাঁর করা হলেও দেখার কেউ নাই। অন্যদিকে গত ২৫ শে ডিসেম্বর ভোরে জেলার ছাতক
উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বনগাঁও মৌজার ১২৪৩/৯ এস পিলার এলাকা দিয়ে ভারত থেকে চোরাকারবারীদের পাচাঁরকৃত ২টি ডেটেনেটর (উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক) পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বিজিবি। অপরদিকে গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকায় অভিযান
চালিয়ে ১৯০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আমির আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া গত ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টায় মধ্যনগর উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের চান্দালীপাড়া ও হামিদপুর গ্রামে পৃথক অভিযান চালিয়ে ভারত থেকে পাচাঁরকৃত ১২ কেজি গাঁজাসহ
মাদক ব্যবসায়ী সাদিকুল ইসলাম, লালন মিয়া, আলী হোসেন, মোঃ মাহবুব, শাকিল মিয়া ও মিঠুন মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে গত ১৪ ডিসেম্ভর সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরস ইউনিয়নের সিংপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে হুসাইন মুহাম্মদ তানভীর,
মোস্তাক আহমেদ, রুনু চন্দ্র নিয়োগী ও বিশ^জিত চন্দ্র দাসকে ১৫ পিস ইয়াবা ও ৬ পুরিয়া হেরোইন ও ৩টি মোটর সাইকেলসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু তাহিরপুর সীমান্তের চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বন্ধের ব্যাপারে জোরালো কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার চোরাকারবারীদের দাপট দিনদিন
বেড়েই চলেছে। তাই এব্যাপারে প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের হস্থক্ষেপ জরুরী বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এব্যাপারে ৪৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ, দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর, মধ্যনগর থানার ওসি জাহিদুল হক, ধর্মাপাশা থানার ওসি মিজানুর রহমান
সাংবাদিকদের জানান- বিষ্ফোরক উদ্ধারের পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এছাড়া ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজাসহ গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক পৃথক মামলা দায়ের করে সবাইকে পৃথক ভাবে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।