সুনামগঞ্জে দিনদিন বেড়েই চলেছে চোরাচালান। আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে জেলার তাহিরপুর, মধ্যনগর, বিশ^ম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারীরা এখন বেপরোয়া।
পাচাঁরকৃত চোরাই মোটর সাইকেলসহ বিজিবি সদস্যকে জানতা ও মাদকদ্রব্যসহ ২ ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গতকাল বুধবার (১৪ জুন) রাতে জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৭৫ পিছ ইয়াবা ও ৮শত গ্রাম গাঁজাসহ উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে
ইসব আলী (৩৫), একই গ্রামের আব্দুল মোতালিবের ছেলে বায়তুল ইসলাম (৩২) কে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই সময় তাদের একটি মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়েছে। এঘটনার প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে থানায়
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্যদিকে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া বাজারে একটি চোরাই মোটর সাইকেলসহ বাঁশতলা বিজিবি ক্যাম্পের ল্যান্স নায়েক হাফেজ
(৪০) কে জনতা আটক করে। এরআগে জুমগাঁও গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মৃত মনির মিয়ার ছেলে চোরাকারবারী মিছির আলীকে নিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে মোটর সাইকেল পাচাঁর করা হয়। পরে এঘটনাটি থানা ও বিজিবি
ক্যাম্পে জানালে বাঁশতলা ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুস সাত্তার ঘটনাস্থলে এসে চোরাই মোটর সাইকেলসহ ল্যান্স নায়েক হাফেজকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। কিন্তু সীমান্ত গডফাদার হাবিব সারোয়ার (তোতলা আজাদ) এর নেতৃত্বে
তাহিরপুর উপজেলার লালঘাট গ্রামের একাধিক মামলার আসামী ইয়াবা কালাম মিয়া, খোকন মিয়া, মানিক মিয়া, জামির আলী, আদম আলী, দুধেরআউটা গ্রামের মনির মিয়া, জিয়াউর রহমান জিয়া, লাকমা গ্রামের রতন মহলদার, কামরুল
মিয়া, বড়ছড়ার ইসাক মিয়া, কামাল মিয়া, চাঁনপুরের আবু বক্কর, চারাগাঁও এর শফিকুল ইসলাম ভৈরব, সুহেল মিয়া, বাঁশতলার আনোয়ার হোসেন বাবলু, সুলতান মিয়া, কলাগাঁও এর রফ মিয়া, রিপন মিয়া ও শ্রীপুর গ্রামের নেকবর
আলীগংদের নিয়ে সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন, জঙ্গলবাড়ি, লালঘাট, বাঁশতলা, লাকমা, টেকেরঘাট, বুরুঙ্গাছড়া, রজনীলাইন, চাঁনপুর, রাজাই, কড়ইগড়া ও বারেকটিলা এলাকা দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন মদ, গাঁজা, ইয়াবা,
নাসিরউদ্দিন বিড়ি, পান-সুপারী, গরু, ছাগল ও কয়লা পাচাঁর করছে। গত রবিবার (১১ জুন) ভোরে তোতলা আজাদগং রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ২০মেঃটন কয়লা ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে। এরআগে গত শনিবার (১০জুন) রাত সাড়ে
১২টায় ১৮মেঃটন ও শুক্রবার (৯ জুন) ভোরে ২৫মেঃটন কয়লাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে। এজন্য পাচাঁরকৃত প্রতি বস্তা (৪০-৫০কেজি) কয়লা থেকে টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির নামে ৭০টাকা, তাহিরপুর থানার নামে
প্রতিটনে ১হাজার ৫শত টাকা ও সাংবাদিকদের নামে ১হাজার টাকাসহ ডিবি পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে মোটা অংকের চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারী রতন মহলদার, ইয়াবা কালাম, ইসাক মিয়া, মনির মিয়া, জিয়াউর রহমান
জিয়া, খোকন মিয়া ও রফ মিয়া। পরে উত্তোলিত চাঁদার টাকা নিয়ে যাওয়া হয় তাদের গডফাদার তোতলা আজাদের কামড়াবন্দ গ্রামের বাড়ির অন্দর মহলে। সেখানে হয় ভাগ ভাটোয়ারা। অন্যদিকে লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী,
সাহিদাবাদ, পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে কয়লা, পাথর, নাসিরউদ্দিন ও মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করে, লাউড়গড় ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত যাদুকাটা নদীতে নৌকা বোঝাই করে নদীপথে বিভিন্ন স্থানে
নিয়ে যাওয়া হয়। আর পাথর পাচাঁর করে প্রকাশ্যে মজুত করা হচ্ছে লাউড়গড় ক্যাম্পের আশেপাশে এবং ৩০টি অবৈধ পাথর ভাংগার মিলে। এব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করলে লাখলাখ টাকা মূল্যের অবৈধ পাথর ও কয়লা জব্দ করা সম্ভব হতো জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুস সাত্তার সাংবাদিকদের জানান- ল্যান্স নায়েক হাফেজ ১লাখ ৫০হাজার টাকা দিয়ে মিছির আলীর কাছ থেকে মোটর সাইকেলটি ক্রয় করেছে। সে নিজে পাচাঁর
করেনি। এব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও ক্যাম্প কমান্ডার খাদেমুল ইসলাম বলেন- আমি চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পে যোগদান করে প্রায় ২শত মেঃটন অবৈধ কয়লা, সুপারী ও গরুসহ বিভিন্ন
মালামাল জব্দ করেছি। টেকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার মোতালিব বলেন- সোর্সদের সাথে আমার এখনও পরিচয় হয়নি। তবে চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।