মোজাম্মল আলম, সুনামগঞ্জে গত ৪ দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট। বেড়েই চলে নদ-নদী ও হাওরের পানি। একারণে হাওর এলাকার জনসাধারণসহ জেলাবাসীর মাঝে আবারো দেখা দিয়েছে বন্যা আতঙ্ক। আজ শনিবার (১ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে-
জেলার সুনামগঞ্জ-বিশ^ম্ভরপুর সড়কের দূর্গাপুর ৫০মিটার ও শক্তিয়ারখলা ১০০মিটার পাকা সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এজন্য এসব স্থানে ইি ন চালিতো নৌকা দিয়ে মানুষ ও মোটর সাইকেল পারাপার করছে। অনেকে আবার ঝুকি নিয়ে প্লাবিত সড়কের পানি দিয়েই হচ্ছে রাস্তা পারাপার। তবে বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার ভারী যানবাহন চলাচল। অন্যদিকে
তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের পোছনা এলাকা হতে পাতারগাঁও হয়ে চকবাজার পর্যন্ত সড়ক পানিতে নিমজ্জিত। একারণে এসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল গত ২দিন যাবত বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও এসড়কের জামালগড় যাওয়ার ব্রীজ সংলগ্ন রাস্তার প্রায় ৭০মিটার পানিতে ডুবে গেছে। তাছাড়া জেলার দোয়ারাবাজার, ছাতক, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও দিরাই-
শাল্লাসহ আরো একাধিক উপজেলার বিভিন্ন পাকা সড়ক প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন- গত ৪৮ ঘন্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রায় ৪৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শনিবার (১ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত জেলার ছাতক পয়েন্ট দিয়ে সুরমা নদীর
পানি বিপদসীমার ৬৯সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং সুনামগঞ্জ সদরে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার প্রধান নদী যাদুকাটা, রক্তি, পাটলাই, বৌলাই, কুশিয়ারা, কালনী, কংস ও চেলাসহ বিভিন্ন নদীর পানিতে ফুলে উঠেছে। তাই পানি উপছে বিভিন্ন সড়ক ও ফাঁকা স্থান দিয়ে হাওরে প্রবেশ করছে। বর্তমানে
হাওরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ। তবে আগামী কয়েক দিন সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যা হওয়ার আশংকা রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বসতবাড়ি প্লাবিত হয়নি। এব্যাপারে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলা এলাকার বাসিন্দা জামির হোসেন, জাকির
হোসেন, কামাল হোসেন, দিলোয়ার মিয়া, হুমায়ুন কবিরসহ আরো অনেকেই বলেন- ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে রাস্তা ডুবে গেছে। হাওরগুলোতে পানি এখন ভরপুর। এভাবে বৃষ্টি হলে ঢলের পানির পরিমান আরো বেড়ে যাবে। তাই বন্যা নিয়ে আতঙ্কের মাঝে আছি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে- গত বছরের ১৬ জুন সকালে ঢলের পানি এসে সুনামগঞ্জ
শহরসহ পুরো জেলায় প্রবেশ করে। এরপর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সব প্লাবিত হয়ে যায়। বিদ্যুৎহীন হয়ে, বন্ধ হয়ে যায় ইন্টানেট সেবা। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। পরে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত নিয়েই আশ্রয়ের সন্ধানে ঘর ছেড়ে বের
হয় অসহায় মানুষ। অবশেষে সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টান ও অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন উচু জায়গায় দিয়ে আশ্রয় নেয়। ৪দিন যাবত সারাদেশে থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে সুনামগঞ্জ জেলা। ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রায় ৩০লাখ মানুষ। বাড়িঘর বিধ্বস্থ হয় প্রায় ৫০হাজার। মৃত্যু বরণ করেন ১৫জন।