মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া- সুনামগঞ্জে গত কয়েকদিন যাবত ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দ্রুত কমছে নদ-নদীর পানি। কিন্তু হাওরের পানি অব্যাহত থাকার কারণে জেলার ১২টি উপজেলার হাওর পাড়ে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষ হয়ে পড়েছে পানি বন্ধি। তাদেরকে বিশুদ্ধ খাবার পানি, পায়খানা, গোখাদ্য ও জ¦ালানীসহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে- আজ শুক্রবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২৬সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া জেলার কুশিয়ারা, চলতি, যাদুকাটা, কালনী, রক্তি ও পাটলাইসহ আরো একাধিক নদীর পানি কমছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের চাপ অনেক কমেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এই জেলার
বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তবে এজেলার তাহিরপুর, মধ্যনগর, বিশ^ম্ভরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার নিন্মা লের
অনেক বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে আছে। একারণে জেলা শহরের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ করতে পারছেনা একাধিক উপজেলার মানুষ। বন্যার আতঙ্ক কমলেও বেড়েছে হাওরবাসীর ভোগান্তি।
হাওরবাসী জানায়- বর্ষার ৩ থেকে ৫ মাস এজেলার হাওরবাসীকে নানা বিধ সমস্যার শিকার হতে হয়। কারণ এসময় চার দিকে অথৈ পানি থৈ থৈ করে। তখন জেলার নিন্মা লের কাছা-পাকা গ্রামীন সড়কগুলো পানিতে ডুবে যায়।
এজন্য ইঞ্জিন চালিতো ছোট-বড় নৌকা দিয়ে একস্থান হতে অন্যস্থানে যাতায়াত করতে হয় হাওর পারের মানুষকে। তারপর যদি বন্যা দেখা দেয়, তাহলে শুরু হয় সীমাহীন দূর্ভোগ।
পরিবার-পরিজন ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে কষ্ঠের আর শেষ থাকেনা। বর্তমানে জেলার মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ইঞ্জিনের নৌকা যোগে সুনামগঞ্জ যেতে হয়। এছাড়া ছাতক, দোয়ারাবাজার,
জামালগঞ্জ, শাল্লা, বিশ^ম্ভরপুর ও তাহিরপুরসহ আরো কয়েকটি উপজেলার সাথে প্রায় অর্ধশতাধিক দুর্গম এলাকার যান চালাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এসব নিন্মা লের বেশি ভাগ টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল গ্রামের সামসু মিয়া, আশরাফ আলী, ফিরোজা বেগমসহ অনেকেই বলেন- আমাদের গ্রামের চারদিকে পানি থাকার কারণে গবাদি পশুপাখি নিয়ে বিরাট সমস্যার মধ্যে আছি।
নৌকা ছাড়া কোথাও যাতায়াত করতে পারিনা। পানির কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলি গ্রামের বাসিন্দা জসিম মিয়া, রাশিদ মিয়া, ইসলাম উদ্দিন বলেন- আমরা যারা হাওর পাড়ে বসবাস করি তাদের সমস্যার কোন শেষ নাই। ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে রাস্তা ডুবে যায়। আমাদের সমস্যা দেখার কেউ নাই।
এব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান- সুনামগঞ্জ জেলায় ২৫ হাজার টিউবওয়েল রয়েছে। তার মধ্যে নিন্মা লগুলোতে ১০হাজার টিউবওয়েল আছে।
যেগুলো পাহাড়ি ঢলের পানি আসলে তলিয়ে যায়। তবে বন্যা মোকাবেলা করার জন্য ১৬ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রয়েছে। যেসব এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দেবে, সেখানে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন- ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ঢলের পানি কমেছে। তাই জেলার সকল নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নামতে শুরু করেছে। বড় বন্যা হওয়ার কোন আশঙ্কা নাই।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান- জেলার কোথাও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যা মোকাবেলা করার জন্য জেলা প্রশাসনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া আছে।