রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক রাষ্ট্র, সরকার ও ইসলামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান তিনি।
এ সময় ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে মাদরাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঠে নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিলেন মামুনুল। এছাড়া তাবলীগের সাদপন্থীদের মারধরের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। জোশের কারণে ওয়াজ মাহফিলের বক্তৃতায় বিশিষ্ট নাগরিকদের মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলেও স্বীকার করেছেন মামুনুল।
এর আগে দুপুর পৌনে ১২টায় সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে নাশকতার ঘটনায় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চাইবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।’
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, গত ২৫ ও ২৬ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও ও হত্যার মতো নাশকতা ঘটনো হয়। এতে মামুনুলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, সেসব মামলায়ও তাকে রিমান্ডে নেওয়া হবে। সাম্প্রতিক তাণ্ডবের ১৮টিসহ ২৩ মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। ব্যাপক সহিসংতা চালানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। টার্গেট করে হামলা চালনো হয় সরকারি স্থাপনায়। করা হয় অংগ্নিসংযোগ। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত করে হেফাজত নেতাকর্মীরা। আক্রোশ থেকে বাদ যায়নি গণমাধ্যমও।
সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় শতাধিক মামলা হয়। এর মধ্যে ব্রাহ্মনবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ও চট্টগ্রাম জেলার ২৩টি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে।
ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার সহিসংতার ঘটনায় মামুনুল হকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি।
ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এ ঘটনায় মামুনুলের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। আমরা অপেক্ষা করছি একটা কেস চলমান আছে। সেটার রিমান্ড চলছে এটা শেষ হলেই আমরা আবার তাকে রিমান্ডে নিয়ে আসব।
সিআইডির তদন্তাধীন মামলাগুলোর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা রয়েছে।
সিআইডি প্রধান জানান, নিবিড় তদন্ত এবং প্রযুক্তিগত ও ফরেনসিক প্রমাণের জন্য মামলাগুলো সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।
সিআইডি প্রধান বলেন, আমাদের ফরেনসিক আছে, সাইবার পুলিশ আছে। যত ধরনের বিষেশজ্ঞ তদন্তের কাজে ব্যবহৃত হয় এইগুলো সবই সিআইডির আছে। এর ফলে আমরা আমাদের কাজগুলো করে বাকি পুলিশেদের সাপোর্ট দিতে পারি।
আরও বেশকিছু মামলার তদন্তভার নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি।
এর আগে সোমবার (১৯ এপ্রিল) মামুনুলকে আদালতে তোলা হয়। আগেই তার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ।