মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া-সুনামগঞ্জ: হাইকোর্টের নির্দেশে সুনামগঞ্জের কারাঘারে বিয়ে হয়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক কয়েদীর। এঘটনায় ১৩ বছর পর এক নারী পেল স্ত্রী অধিকার। সেই
সাথে ওই নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান পেল তার পিতৃ পরিচয়। এঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্ঠি হয়েছে।
জানা গেছে- জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামশী নবীনগর এলাকার বাসিন্দা দুলভী বেগম ২০১০সালে প্রেমের সম্পর্কে সূত্র ধরে পরিবারে অগোচরে একই এলাকার আব্দুর রশিদ শহিদকে
গোপনে বিয়ে করেন। এমতাবস্থায় দুলভী বেগম ২ মাসের অন্তঃসত্বা হওয়ার পর স্বামী আব্দুর রশিদ শহিদ ইংল্যান্ডে চলে যান। এরপর থেকে স্বামী শহিদ তার স্ত্রী দুলভী বেগমের সাথে সকল
প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এদিকে বছর পেরোতেই দুলভী বেগম একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেয়। পরে স্বামী শহিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাদের বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এনিয়ে তাকে পরিবার ও এলাকাবাসী নানান অপবাদ সইতে হয়।
অবশেষে সন্তান ও স্ত্রীর অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য অসহায় দুলভী বেগম ২০১১সাথে জগন্নাথপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। বিয়ের কাবিননামাসহ অন্যান্য প্রমানপত্র না থাকার
কারণে দুলভী বেগম পড়ে যান মহাবিপাকে। এমতাবস্থায় স্বামী শহিদ দেশে ফিরে আসে এবং আবারো বিয়ে করে। সেই স্ত্রীর ঘরে আরো দুই সন্তান রয়েছে।
এদিকে দুলভী বেগমের মামলা থানা থেকে আদালতে হস্তান্তর করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে দুলভী বেগমের সন্তানের ডিএনএ পরিক্ষা করে প্রমানিত হয় ওই সন্তান শহিদের। প্রায়
১৩বছর আইনী লড়াইয়ের পর ২০২২ সালে ৩১ অক্টোবর স্বামী শহিদ অভিযুক্ত প্রমানিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে আদালত।
সম্প্রতি সাজাপ্রাপ্ত স্বামী শহিদ ভোক্তভোগী দুলভী বেগমকে মেনে নিয়ে পুনরায় বিয়ে ও সন্তানকে স্বীকার করে আইনজীবির মাধ্যমে উচ্চ আদালতে আবেদন জানায়।
পরে আদালতে নির্দেশে গত মঙ্গলবার (২৬শে ডিসেম্ভর) সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ কারাঘারের জেল সুপারের কক্ষে ৬ লাখ টাকা দেন মোহর ধার্য করে কাজী দ্বারা আসামী আব্দুর রশিদ শহিদ ও
দুলভী বেগমের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এই বিয়ের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা হোসেন, জেল সপার শফিউল আলম, অতিরিক্ত জেল সপুার হুমায়ুন কবিরসহ দুই পক্ষের স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন।
এব্যাপারে ভুক্তভোগী দুলভী বেগম বলেন- অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারের পর আমি ও আমার সন্তানের অধিকার ও পরিচয় ফিরে পেয়েছি। এজন্য আদালতের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
এখন আমি সুন্দর ভাবে সংসার করতে চাই। অতিরিক্ত জেল সুপার হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন- সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে এই বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে।