মোঃ জাহাঙ্গীর আলম নোয়াখালী প্রতিনিধি, নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় আবদুল্লাহ আল-নোমান (২২)নামের এক তরুণকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগে থানার উপপরিদর্শক
(এসআই) সঞ্জয় সিকদারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পুলিশ সুপারের সাময়িক দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপস্) মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাঁকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
এ ছাড়া পৃথক আরেকটি আদেশে তরুণকে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান
রাজিবকে। কমিটির অপর দুই সদস্যরা হলেন, সেনবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন ও সদর সার্কেল কার্যালয়ের পরিদর্শক আবু শাহেদ খান। কমিটিকে আগামি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা এরই মধ্যে তাদের কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া বারোটার দিকে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকায় অবস্থানকারী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ঢাকা থেকে মুঠোফোনে এসব পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে নিশ্চিত করে
তিনি বলেন, এ ঘটনায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দায়িত্ব পালনে কোন গাফিলতি ছিল কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
মারধর ও নির্যাতনের শিকার ওই তরুণের নাম আবদুল্লাহ আল-নোমান (২২)। তিনি সেনবাগ বাজারের একটি দোকানের কর্মচারী। আহত অবস্থায় থানা থেকে সাদা পোশাকের একজন পুলিশ সদস্যসহ তাঁকে বৃহস্পতিবার
দুপুরে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেএ ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সেখানে সার্জারি বিভাগে তাঁর চিকিৎসা চলছে। বৃহস্পতিবার থানা হাজতে আটক আপন বড় ভাইয়ের খবর নিতে ওই তরুণ থানায় গিয়ে পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,
আবদুল্লাহ আল নোমান সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের উত্তর কাদরা মজুমদার পাড়া সংলগ্ন আবু তাহেরের নতুন বাড়ির বাসিন্দা। নোমানের বরাত দিয়ে তাঁর মা তৈয়বের নেছা বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর বড় ছেলে শাহাদাত হোসেনকে বাড়ির পাশ থেকে বিনা কারণে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।
খবর পেয়ে তাঁর ছোট ছেলে নোমান বড় ভাইয়ের খোঁজ নিতে থানায় যান। থানায় উপপরিদর্শক সঞ্জয় সিকদারের কাছে শাহাদাত হোসেনকে আটকের কারণ জানতে চান।
এ সময় ওই উপপরিদর্শকের সঙ্গে নোমানের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নোমানকে থানার একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বেধড়ক পিটিয়েছেন ওই উপপরিদর্শক। এতে নোমান অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেেেক্সর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাঈম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে ওয়াকিটকিসহ সাদাপোশাকের এক পুলিশ সদস্য আবদুল্লাহ আল নোমানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। নোমানের বুকে ও পিঠে জখম রয়েছে, তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।
তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে হাসপাতালে রাখা হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। আহত নোমানের একজন আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শাহাদাতকে ছেড়ে দেওয়ার নামে এক রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকাও নিয়েছেন সঞ্জয় সিকদার।
এরপরও শাহাদাতকে ছেড়ে না দিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষরের জন্য তাঁদের চাপ দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা ওই কাগজে স্বাক্ষর করেননি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপপরিদর্শক সঞ্জয় সিকদার বলেন, শাহাদাত হোসেনকে গাঁজাসহ আটক করা হয়েছে।
তাঁকে থানায় আনার পর তাঁর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সামান্য ঝামেলা হয়েছে। নোমান নামে কাউকে তিনি চেনেন না। নোমানকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন, সেটিও তিনি জানেন না। পরিবারের সদস্যরা জানান, আটক শাহাদাত কিছুদিন প্রবাসে ছিলেন।
সেখানে যে কাজ দেওয়ার কথা ওই কাজ না দেওয়ায় তিনি দেশে এসে ভাইয়ের সঙ্গে একই দোকানে কাজ করেন। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।