গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী কেরানীরটেক এলাকায় একটি ক্লাবকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার রাতে এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ হামলায় ৪৭নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মনির হোসেন মজুমদার গ্রুপের আহত হন, সাদ্দাম হোসেন (২৫), আবু সাইদ (২৪), বিপ্লব (৩২), রাসেল (২০), আকাশ (২০), সিয়াম (২১), রানা (২৫) ও মনির আহম্মেদ মজুমদার (৬২)।
অপরদিকে ৪৬নং ওয়ার্ড কেরানিরটেক এলাকার আক্তার গ্রুপের শেখ নূর মোহাম্মদ, রোকি বেগম (৫০), কামাল হোসেন (৪৫), জালাল শেখ, বিল্লাল শেখ, আক্তার। এদের মধ্যে গুরুতর আহত সাদ্দাম, রানা ও বিপ্লবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, ২০০৪ সালে একদল বিপদগামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হন জনপ্রিয় সাংসদ আহসান উল্লাহ মাস্টার। সেই হত্যা মামলার প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন সুমন আহম্মেদ মজুমদার। কয়েক মাস পর সুমন আহম্মেদ মজুমদার আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর গাজীপুর সিটির ৪৬ নং ওয়ার্ডের (সাবেক ১০ নং ওয়ার্ড) কেরানীর টেক এলাকায় বিদ্যমান ২ টাকার সমিতি নামে পরিচিত ১৯৮৭ সালে “আমতলি নবতারকা যুব সমিতি” যাহার (রেজি: নং-০ঘ-৯৫) যুব সংহতি ক্লাব প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন নূরুল ইসলাম সরকার।
পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে ক্লাবটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে রুহুল আমিন মুন্সীকে সভাপতি, আজহারকে সাধারণ সম্পাদক ও জুলহাস উদ্দিনকে দপ্তর সম্পাদক করে সংগঠনটি পরিচালনা করে আসছিল। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে স্থানীয় যুবকরা সুমনের স্মৃতি ধরে রাখতে এই ক্লাবটিতে সুমনের নামের উপর বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতো। এমনটা জানালেন সাবেক পরিচালনা কমিটির দপ্তর সম্পাদক জুলহাস উদ্দিন।
সম্প্রতি উক্ত ক্লাবটির দখল ও আধিপত্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দু’টি পক্ষের মধ্যে বেশ কিছু দিন যাবত দ্বন্দ চলে আসছে। মঙ্গলবার রাতে ক্লাবের মেরামত কাজ নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা ও সুমন আহম্মেদ মজুমদারের বাবা মনির আহম্মেদ মজুমদার ও তার ছেলে সাদ্দামের সাথে অপর পক্ষের আক্তার হোসেন ও নুর মোহম্মদসহ তাদের লোকজনের কথাকাটি এক পর্যায় উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
এরই জের ধরে বুধবার রাত সাড়ে ৭ টায় মনির আহম্মেদ মজুমদার ও সাদ্দাম হোসেন মজুমদার গ্রুপের সাথে আক্তার হোসেন ও নুর মোহম্মদ গ্রুপের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উভয় পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সন্ত্রাসীদের হামলায় উল্লেখিত ব্যক্তিরা আহত হয়। এসময় ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে উভয় পক্ষ।
এ ঘটনায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ইতিপূর্বে এই ক্লাবে জামাল আহমেদ নামে এক যুবক তত্ত্ববধান করতো। বিগত ১১ বছর পূর্বে সে নিখোঁজ হয়, অদ্যবধি তার কোন খোঁজ মিলেনি। জামালের পরিবারের লোকজন জানায়, সে জীবিত না মৃত তার কোন সন্ধান পাইনি।এলাকাবাসী জানান, মনির আহমেদ মজুমদার গ্রুপ এলাকা বিভিন্ন সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তার রয়েছে বিশাল একটি পেটুয়া বাহিনী। চাঁদাবাজী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করে কোটি টাকার বনে গেছেন।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষ টঙ্গী পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিন) মোঃ ইলতুৎ মিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যাবস্থা প্রক্রিয়াধীন।