কুড়িগ্রামে প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে সর্ব রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকগণ। নিয়মবর্হিভূতভাবে ডাক্তার পরিচয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষাসহ এ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন করছেন তারা। এতে করে প্রত্যন্ত এলাকার সঠিক চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হবার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়,জেলার উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের গোড়াইহাট বাজারের চেম্বার খুলে বসেছেন পল্লী চিকিৎসক এমএ রাজ্জাক। নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরিক্ষাসহ এ্যান্টিবায়টিক প্রেসক্রিপশন করেন অনসায়সে। তিনি রোগিকে নাম না জানিয়েই প্রথমে একটি ইনজেকশন দিয়ে ৫শ টাকা এবং কম্পিউটারের সফটওয়ারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে ৫শ টাকা এবং তার ভিজিট ১শ টাকা নেন। একই অবস্থা সদরের পৌর এলাকার ভেলাকোপার পল্লী চিকিৎসক ফয়জার আলমেরও। তিনিও নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে কম্পিউটারের সাহায্যে রোগ নির্ণয় করে এ্যন্টিবায়টিক প্রেসক্রিপশন করছেন।
পল্লী চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাক এবং ফয়জার আলমের মতো জেলার সিংহভাগ পল্লী চিকিৎসকরা তাদেরকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এমন অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগিদের নিকট হতে চিকিৎসা সেবার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভোগান্তিতে পড়ায় বাধ্য হয়েই পল্লী চিকিৎসকদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। নিয়ম না থাকলেও পল্লী চিকিৎসকগণ নিজেদের ডাক্তার পরিচয় দিয়ে অনায়সে প্রেসক্রিপশন করছেন। দারিদ্রপীড়িত খ্যাত জেলায় অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার আর ডাক্তার পরিচয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও নির্বিকার প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ফার্মেসীর ব্যবসা করছেন অনেক পল্লী চিকিৎসক। ফলে সরকার রাজস্ব হারার পাশাপাশি গ্রামের সহজ সরল মানুষ সঠিক চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
পল্লী চিকিৎসক এমএ রাজ্জাকের কাছে চিকিৎসা নেয়া মজিবর রহমান(৫০) বলেন,বুকের ব্যথা আর দম নিতে কষ্ট হওয়ায় আজ্জাক ডাক্তারক দেখানো। তাই একটা ইনজেকশন দিয়া ৫শ টাকা আর কম্পিউটার দিয়া দেখিয়া ৫শ টাকাসহ ভিজিট নেইল ১শ টাকা।
রোগি সুমি বেগম(২৮) বলেন,আমার পায়ে বিকহাউজ (ঘা) হয়েছে। ডাক্তার দেখি ইনজেকশন আর প্রেসক্রিপশন দিয়ে ৬শ টাকা নিলো।
শাহেরা বেগম (৫২) বলেন,আমার মাথার সমস্যার কারণে ফয়জার আলম ডাক্তারকে দেখিয়েছি। তিনি আমাকে ৩টি ইনজেকশনসহ মেলা ঔষধ লিখে দিয়ে বলেন ৭দিনের চিকিৎসা দেবার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৬হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু সেই চিকিৎসায় ভালো না হয়ে ওল্টো মাথার যন্ত্রণা বেশি হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হই। সেখানে থাকার সময় হাসপাতালের ডাক্তার বলেন সময় মতো না আসলে হয় মারা যেতাম না হলে পাগল হয়ে থাকতে হত সঠিক চিকিৎসা না হবার জন্য।
স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল বলেন,আমরা পল্লী চিকিৎসকের কাছে যাই না। তারা ডাক্তারি পাশ করছে না কিনা সেটা বাপু জানা নাই। বহুদূর থেকে মানুষ চিকিৎসা নিতে আইসে সেটাই দেখি। কোন প্রশাসনের কোন লোকজন দেখতেও আসে না।
নতুন অন্তপুর বাসিন্দা আজগর আলী বলেন,সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায় না। আর হাসপাতাল গুলাতে দালালের খপ্পরে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এজন্য গ্রাম কন কিংবা চরের মানুষে কন তারা বাধ্য হয়ে পল্লী ডাক্তারের চিকিসা নেন।
পল্লী চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাক বলেন,বিধি মোতাবেক রোগিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। আর কম্পিউটারে একটি এ্যাপস দিয়ে রোগির রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেবার কথা স্বীকার করলেও ইনজেকশন দেয়া এবং এ্যান্টিাবায়টিক লেখার বিষয়ে অস্বীকার করেন। পল্লী চিকিৎসক হয়েও ডাক্তার পরিচয় দেবার বিষয়ে তিনি বলেন এগুলো ঔষধ কোম্পানি হতে দিয়েছে।
পল্লী চিকিৎসক ফয়জার আলম প্রেসক্রিপশন প্যাডে ডাক্তার এবং এ্যান্টিবায়টিক লেখার নিয়ম আছে বলে জানান। তিনি আরো বলেন,জেলায় অনেক পল্লী চিকিৎসক প্রশিক্ষণ ছাড়াই অবৈধভাবে চেম্বার দিয়েছে।
এই বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুর রহমান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান,জেলায় কত গুলো বৈধ পল্লী চিকিসক আছে সেই হিসেব নেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। আর মাঠ পর্যায় পল্লী চিকিৎসকদের চেম্বারে অভিযান চালানো হয় না শুধু মাত্র সমন্বয়হীনতার অভাবে। কেননা অভিযান পরিচালনা করতে গেলে স্বাস্থ্য বিভাগ,পুলিশ বিভাগ এবং ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন হয়। এই তিন বিভাগের সমন্বয় হবে না ততদিন অভিযান পরিচালনাও হবে না।
এই বিষয়ে অবসর প্রাপ্ত সাবেক সিভিল সার্জন এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন,পল্লী চিকিৎসকদের অনেকেই কম্পিউটারের মাধ্যমে চিকিৎসা দিচ্ছেন। ডাক্তার পরিচয়ে এ্যান্টিবায়কি প্রেসক্রিপশন লিখে দেয়া অবৈধ। সাধারণ মানুষের সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেত এবং প্রতারণা বন্ধ করার জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উপর জোড় দেন তিনি।